রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

অগ্রহায়ণ

প্রতিদিন নেকড়ের ডাক শুনি, জনাকীর্ণ শহরের মধ্যভাগে।
চাঁদের দিকে ছুটি, পূর্ণিমার উপকথা লোকায়ত জীবনে
এখনো আধো আধো আছে। সেই সূত্র ধরে ধীরে ধীরে
রূপালি আঁধার নামে, নামে প্রণয়দীর্ঘ ব্যভিচারী ঘুম;

সেই ঘুম, নেকড়েশ্রুতির ঘুম-
আর মৃন্ময়ী তুমি-
কান পেতে আছে
রাত, এই মশহুর রাতের ধ্বনি
হঠাৎ কোমল তানে বেজে ওঠে

দূরে হিম কুয়াশার গ্রাম ছেড়ে ধেয়ে আসছে ক্রৌঞ্চনগরে

আমি শুনি রাতভর অর্ধদিবসব্যপী
ডেকে যাচ্ছে বিরহী শ্বাপদ
সেতার সরোদ কি তবলার ছন্দক্ষয়

কুলিন মানুষেরা মৃদঙ্গের মৃদুস্বরে মৃদু মৃদু কোলাহলে
শাস্ত্রীয় কান্নায় ভারী করে ঢাকার অগ্রহায়ণ।

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

কিছু নেই

মাটিতে নেই কিছু, মাটিও নেই
সব উল্টে গেছে
হাত পা নখের আঁচড়
জ্যামিতি ও ত্রিকোনমিতি

সব উল্টে গেছে। আব্রু ও ভ্রু
সনাতন গোস্বামী ও তার নামসংকীর্তণ
প্রহরে প্রহর, অভিধান এবং নির্মাণ

রাজ ও শিল্প নীতি, ঔষধের সুলভ সমাহার
পাখির ঠোঁট, চোখের জিজ্ঞাসা
অসন্তোষের হাট
সর্বনাম ও অব্যয়, মূল্যস্ফীতি
কিছু নেই। কোথাও একটি প্রজাপতি নেই

মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৪

অমূল্য চরণ সংক্রান্ত একটি মেটাফোর


এখন বৃষ্টি আসে না
বর্ষা এলে দেশে
কুকুর ডাকে
লোকে
খালি
খালি পায়ে হাঁটে

দূরে তারার ম্লান পতনের ধ্বনি
ফিরে আসে আরেক বার

অমূল্য চরণের ডাহুক শিকার
অমূল্য চরণের ফাঁদ
এইসব নোংরা নর্দমায় কবেই ভসে গেছে

দেবদারুর শহরে বারোমাস ধূলোঋতু
নয়াটোলার অদূরে বারোমাস
পোয়াতিচিৎকার

মেরুন মেরুন রোদ, উপোসীরা উধাও

তুমি এলে না
তুমি এলে না

বছর বছর
এসে চলে যায়
আষাঢ় ও শ্রাবণ

অমূল্য চরণ চলে গেলে
ফিরে আসে দারুণ দাহন

বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৪

বন্দুকের দোকান

আসছে অতিসূর্যের দিন, তাই পাখি নিয়ে বেড়াতে গেছে সবাই
তাদের ক্রমবিলীন শব্দের থেকে শুক্রানু ধেয়ে আসে,
আসতেছে নাতিশীতোষ্ণ জলভান্ডে-

মোটামুটি সরল এই দৃশ্য থেকে লাইসেন্স তুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
পল্টন মোড়

বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৪

গান

তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
দেখতেছিলাম বৃষ্টি
তোমার ছবি দখেতে দেখতে
উদাস হইল দৃষ্টি

জলের ভিতর থোকায় থোকায়
জারুল ফুলের ঘ্রান
বৃষ্টি জলের ফোটায় ফোটায়
তোমার অভিমান

দৃষ্টি আমার শীতল হাওয়ায়
আর্দ্র অনুরাগে
একলা ঘরে আঁধার নামায়
তোমার অস্তরাগে

তুমি তখন বাইরে থেকে
ভিজিয়ে দিলে কেশ
অলক ঘ্রানে ছড়িয়ে রেখে
জাড়িয়ে রাখ রেশ


বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

কাউকে মনে পড়ে না

কত দিন কাউকে মনে পড়ে না
কতদিন ক্লোন ফেরি করে করে
মাঝ পথে থেমে পড়ি না

এক. ভোর নয় রাগিনি নয়
একটি মুখের দিকে তাকিয়ে
হয়ে যাবো রিক্‌সা মেইকার

দুই. পরিচিত মুখ দেখে
হাত গুটিয়ে নিই
এক পয়সার দিন শেষে
এখন নিদারুণ অবসর

তিন. লোকপ্রিয়তার আলতা কেনার সাধ
সবার পূর্ণ হয় না
কতদিন, কত হাজার দিন
কাউকে মনে পড়ে না

অথবা.
সবাই এক একটা হাতি
ঈশ্বর, তুমি মহান মাহুৎ

দেখলাম, চিলেকোঠায় আমি নেই; আছি আম বাগানে, কাঠঠোকরার লেজে। একদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম ঠাকুরের মেলায়। তারপর কেঁদেকেটে আমাকে তো খুঁজে পেলো অন্যরা শুধু আমি পেলাম না। চিলেকোঠায় বসে থাকে কাঁসার গ্লাস। গ্লাসটি ডায়রিতে ঢেকে রেখে কে যেন চলে গেছে গ্রাম ছেড়ে। আমি তাকে চিনতাম কিনা মনে পড়ছে না, বিরাশি থেকে আজ অবধি মনে পড়ছে না; কতদিন কত হাজার দিন চলে গেল- ঠাকুরের মেলায় যদি খুঁজে পাই তাকে

চার. এবং অতিসত্ত্বর, চেয়েছি তোমাকে
তুমি এক আজব আর্গুমেন্ট, দয়াময়
তোমাকেও দেখি না বহুদিন হয়

পিঠে বসে আছ, শুধু শুধু হরি
হরের বেদনা হয়ে, অযথাই

পাঁচ. অযথাই?

এই যে শহর, অজস্র ডিম্বানু বুকে নিয়ে শুয়ে আছে তার ভালো নাম কী? শাখারী বাজার নাকি মানিক নগর? মনিমানিক্যে ভরপুর দেশে কেউ কেউ ঘুমোতে যায় মাঝ রাতে। আকাশ থেকে পরী নামে, নতুন শহরে ভোর আসে; কার ফ্ল্যাটে? কার বিছানায় অযথাই ক্ষয় হয় সবুজ রাত্রিগুলো? আমার হাত ধরে থাকে যে, নিয়ে যায় গভীর অনুকম্পায়, তাকে মনে পড়ছে না; কত শত দিন আমি তার হাতের ইশারা বুঝি না। ফেরিওলার মতো ঘেমে উঠি, ঘমাচি হয় একাকী শরীরে। তবু এ শহর বৃষ্টিময় সিজোফ্রিনি।

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৪

কৃচ্ছ্র

অনেক মৃত্যুর পরে জন্ম নেয় শহরের ঘুম

ইনসোমনিয়ায় ডুবতে থাকা মাংসের বুদ্বুদ
রোজ পথ হাঁটে

পথে পথে কদ্বেল-আঙুরের মেহ
কৃচ্ছ্র সাধনের কুটিল পোস্টার

গলির গভীরে বাজে
নিশিকুকুরের বুক ফাটা চিৎকার

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অশ্বারোহীর বিকেল

অশ্বারোহীর বিকেল টগবগিয়ে নামে
এই সন্ধ্যাকাজল ধেয়ে যাবে নিশুতি শেওলার দিকে।
আদিম পৃথিবীর ঘাসগুলো অথবা তাদের ঘ্রাণ যে পাঁজরে বসত নিয়েছে
তার দিকে চেয়ে আছি, বৃষ্টির চেয়েও মনযোগী বাসনায়।

প্রতিদিন চিহ্ন রেখে যাও রোদ— মাঝি ও জলের অতীতচারী মূল্যবোধ যত
ভেসে উঠবে ঢাকার গৃহীনিদের মতো ফুলে-ফেঁপে। বয়স্ক হয়ে ওঠা চাঁদ
নাকি লাশ দুর্নিবার ঘোরে চরাচরে। কার শরীরের রোদ জ্যোৎস্না হয়,
কার অন্তর্বাসে লুকিয়ে থাকে আমার পাঁজর?

সুমেরু-সকাল

আমি তার ডাকনাম ভুলে গিয়েছি। অলস বৃষ্টিতে ঝোপঝাড়ে অতিবেগ আসে
আমি ভুলে গিয়েছি তুচ্ছ সাপ ও দড়ির খেলা, খেলনাঘর

আদি অক্ষরের গুহা থেকে পাখির গান ভাসে, মৃত্যুনগরে চলো ভালোবাসা শব্দটি বিক্রয় করে দিই
অতিবৃদ্ধ অথবা যুবকের দেনা শ্যাওলার দামে শোধ করি। জলের প্রস্রবণে
তোমাকে বলি, শোন, দৃষ্টি ও দৃশ্যের আঁতাত থেকে বাইরে এসে
বলে দাও সেই নাম, যার কুহক বাসনায় বধির হয়ে আছি, বৃষ্টি আর আলস্যের দেশে

তারপর ধুধু মাঠ; শষ্যহীন

গোধূলিমিনারে দাঁড়িয়ে আরো অনেকের মতো তাকালে দেখা যাবে সুমেরু-সকাল

পাখি ও প্যারিস

অই পাখি, যে পাখি উড়ে আসে
এসে জলচৌকিতে বসে
খুটতে থাকে
নখ ভালো করে দেখে

তারে দিনরাত আদার খাওয়াইও না

ভূকূঞ্জে মেঘ, উড়ে আসে
উড়ে আসা মেঘ
মোটা মোটা মেঘ
চলে যাও, না হয় নেমে যাও

তোমারে পাঠামু না প্যারিসে

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

নির্জ্ঞান



আমার কোন জ্ঞান নেই, বৃষ্টিতে ধুয়ে দিচ্ছ গ্রীষ্মতা
পত্রহীন কাণ্ডে জলের প্রলেপ শুষে নেয় প্রহরীগণ।

রাতে চাঁদ আসে, তোমার বিভা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে
ঘর থেকে ঘরে, প্রকম্পিত টিনে। প্রভু, আমি দৃষ্টিহীন

আমাকে তৃষ্ণা দাও, তোমার প্রজ্ঞার মেরুন মূর্তি থেকে
সব সাপ নেমে পড়েছে উঠোনে, প্রলয়ঙ্করী ফণায়

কৃপা করেছ, এখনো হয়নি যেতে অগ্যস্ত মোড়ে। মেষ 
ও মশক ওড়নায় ঢাকে মুখ, আমি শুনতে পাই না কিছুই

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

আমি ও নিঃসঙ্গ ভেড়া



যে নিঃসঙ্গ ভেড়ায় চড়ে স্পিনিং মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম
তার কোন পশম ছিল না। তার কোন ইতিহাসও ছিল না।
সেই ভেড়ার খুরে মাতাল জিজ্ঞাসা ছিল, ছিল বুনো গন্ধ

কিন্তু মিলে প্রবেশের পথে বিশাল পাপোশে সেই গন্ধ-
খুর মুছে গেল। ফলে সে ভুলে গেল তৃণভোজ রীতি।

সুতরাং মেশিনের রাজ্যে সে আর আমি পরস্পরের
আমিষের উৎস হয়ে ক্ষুধার অপেক্ষা করতে লাগলাম

এ কোন নগর

এ কোন নগর? অ্যাত তীব্র আলোয় হাজার হাজার সাপেরা ক্রীড়ায় মত্ত; এ আলো ভেদ করা যাবে কি? মধ্যদিনে এখানে এসে পড়েছি-
আমার হাত থেকে গজিয়ে উঠছে আরো অজস্র হাত, নখ শল্যবিদ্যায়
পারদর্শী হয়ে উঠছে- চোখ গলে যাচ্ছে তীব্র আলোচ্ছটায়-
আমি এ নগরীর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি? এ নগর প্রশ্নবোধক আলিঙ্গনে টানছে
আমি তার আলোকিত কামনা উপেক্ষা করতে পারছি না-
আমার পুরনো হাতগুলো খসে পড়ছে- অভিজ্ঞ সিঁথি থেকে খসে পড়ছে
পরিচিত চুল- আমার বয়স্ক ঠোঁট গলে পড়ছে কালো রাস্তায়- যৌনাঙ্গ ভীত
হয়ে পড়ছে- আমি আমার কঙ্কাল ধরে ধরে হাঁটছি; তার হলদেটে পাঁজর থেকে প্রতিফলিত আলো আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে-
আমি চলে যাচ্ছি নগরের অভ্যন্তরে
নাভী বিন্দুতে
যেখানে আমার জননী বাস করেন
তাঁর কুয়াশাচ্ছন্ন নাভীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মতো
বসে থাকতে চাই---
তিনি আমাকে স্তন্যপান বিদ্যা শেখাবেন
বাঁশি বাজানো শেখাবেন
হাত মুষ্ঠিকরা শেখাবেন
কি করে হাঁটতে হয় মহাপিচ্ছিল বারান্দায়
তার কৌশল শেখাবেন-
তিনি আমাকে বেঁচে থাকার কৌশল পত্র পড়ে শোনাবেন-
আমার কঙ্কালে তাঁর স্নেহমুগ্ধ চুমু লেগে আছে
করোটির বাম দিকে কাজলচিহ্ন দেখে
খসে যাওয়া চুলে চাঞ্চল্য নেমে এসেছে- অভিমানে
আমি নগরের নাভী থেকে
আমার জননীর নাদেখা স্নেহ থেকে বহুদূরে চলে এসেছি

নগরীরর এ প্রান্তে যিনি শস্য ফলান- নষ্টামি করেন- বাসের হেল্পার যিনি
মেয়েদের পিঠে হাত দিয়ে তুলে নিতে চান গতির দিকে- তিনি আমার পিতা।।
আমি তাঁকে ব্রিজের কাছ থেকে চিনে নিয়েছি
সোডিয়াম লাইটের নিচে তাঁর সাথে ঘুমিয়ে পড়েছি
আমাদের যৌথ নিদ্রার উপর দিয়ে গড়িয়ে গ্যাছে বহুরাত
আমরা ঘুমিয়ে পার করেছি রাতজনিত দুর্ঘটনা সকল

আমার পিতা, যাঁর খোচা খোচা দাড়ি নেই
আমার পিতা, যাঁর লুঙ্গির বয়স দুই বছরের কিছু বেশী
আমার পিতা, যিনি হেঁটে হেঁটে চলে যান ব্রিজের অই পাড়ে
আমি তাঁকে সর্বাত্মক উপেক্ষা করে চলে যাই বছরের পর বছর

উপেক্ষা ও বেদনা শেষে নগরী অন্যপ্রান্তে স্থির হই। সেখানে খুঁজে পাই আমার গলে যাওয়া ঠোঁটের ফসিল, হাতের আঙুল আর চুলের কলপ- এই কুড়িয়ে পাওয়ার মহোৎসবে আমি সাহস ফিরে পেলে এক ভয়ার্ত অন্ধকার নামে নগরের সমস্ত ল্যাম্পপোস্টে। আমি আলোকিত কঙ্কালের ভীত পাঁজরে নড়বরে শান্তনা গুঁজে দিই- তার নির্লিঙ্গের কথা স্মরণ করিয়ে দিই--
কুষ্ঠরোগীরও পিতা হাওয়ার বাসনা জাগে- এরকম অভিশাপে ক্রীড়ারত সাপেরা শীতনিদ্রায় চলে যায়- আমি আলোহীন আলোকিত নগরের দুর্বোধ্য ঠিকুজি অবশেষে খুঁজে পাই চালের গুদামে--- পূর্বপুরুষের হায়ারোগ্লোফিতে উদ্ধারহীন ডুবে যাই অচেনা নগরের অন্ধকারে।

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০১৪

স্পর্শ বিষয়ক দু্ইটি

এক.
কিছুই ছোঁয়া যাচ্ছে না- হাত অথবা হাতিয়ার
দৈবাৎ, কিছু স্মৃতি ফিরে আসে
যা অস্পর্শী

যা আনন্দ দেয়, গাছের গোড়ায় জমে থাকে
যা উলম্বের অধিশ্বর;

সবই অচ্ছুৎ। কিন্তু অবস্তু নয়। তবু
ছোঁয়া যাচ্ছে না

দুই.
গভীর হ্রদের তলানি, অসূর্যের স্পর্শে
শুধু ইশারা ইঙ্গিত করে

তর্জনি থেকে মৃতকোষেরা পাড়ি দেয় মহাকাল,
পেরুতে চায় অগস্ত্য দূরত্ব