বুধবার, ২৫ মে, ২০১১

একত্রিশ থেকে বেয়াল্লিশ

রুপালী চোখ, আগুন আর বাম বাহুর টিকার দাগ

এখনো স্মৃতিভ্রষ্ট হই নাই।

পুকুরের ঢেউয়ে বালিশ সাজায়ে রাখা অন্যায় হবে- এরকমই বিধান ছিলো আমাদের শৈশবে; মানে মাননীয় এরশাদ যখন বন্যার পানিতে নেমে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে পোজ দিতেছিলেন।

এরকম শৈশব সবার আসে না। এরকম ডাহুক শিকার সবাই পারে না।
ফাঁদ পেতে বসে থাকতে হয় সুদীর্ঘকাল-

ছোট্ট একটা মাছের কথা এখনো মনে আছে; আধডুবো ধানের ভিতরে আশৈশব বসে থেকে মাছটির চোখের রূপালী রঙ চিনতে পেরেছিলাম। রূপালী পর্দার মতো ক্লাইমেক্সে ভরপুর সাঁতার প্রতিযোগীতা চলতেছিলো তখোন সেই চোখে।

মাসকালাই গাছের ডালে টিয়ে যখন কামরাঙা খোঁজে
তখন বুঝতে হয় অনর্থ হয়ে গ্যাছে কোথাও; কোথায়?
হাফপ্যান্টের পকেটে এসবের কোন উত্তর থাকতো না।

মালতি। আমাদের মধ্যে তুইতো সবচে' ভালো সাপলুডু খেলতি। সেজন্যই কি ওঝা সর্দার তোকে গোপন করেছিলো এক রাতের জন্য।। ফিরে এসে আর কোনদিন লুডুর বোর্ডে হাত দিসনি। এবং তারপর থেকে তুই আগুন ভালোবাসতি খুউব। আমি জানতাম; আমরা দেখেছিলাম এক ভোরে আগুনের সাথে তোর ভষ্মদীর্ণ মিলন ছাই।

আমাকে কি তোর মনে আছে আফিয়া বানু? অন্ধচোখে কিভাবে স্বপ্ন দেখা যায়, আমাকে শেখাবি? আফিয়া, আফিয়া লো, তুইও শেষমেশ শিখে গেলি নাগরিক নিঃশ্বাস! ভুলে গেলি ভালোবাসার মতো আর কিছুই ছিলো না তোর, কেবল বাম বাহুর জ্বলজ্বলে টিকার দাগ ছাড়া- একটি নীরব কিশোর যার পাণিপ্রার্থী ছিলো।

কতটা উচ্ছন্নে গেলে মালতির স্বপ্নে সুরেশ নেমে আসে?
কতটা উচ্ছন্নে গেলে সুরেশের চোখে আফিয়ার স্বপ্ন দেখা যায়?
...
কলসেন্টারের কোকিল কণ্ঠীরা উত্তরহীন; নিঃশব্দে কাঁদেÑ জুন এর রোদের দুপুরে সড়কের পাশ ঘেঁষে বসে থাকা কুমোরের মাটির হাড়িতে এইসব শৈশব রক্ষিত আছে জেনে।।


কোথায় পাবো তারে

কোথাও মিশ খাওয়াতে পারছি না। যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।।

গীর্জার ঘণ্টাধ্বনি সেই কবে শুনেছিলাম, ওদের মেয়ের নাম ছিলো সেলিনা ডি কস্ট্রা; কেমন কোকড়ানো চুল ছিল, ঠোঁট ভরা অযুত আঙুর - আমাকে বলেছিলো- নেবে? হৃদয়ের দূর্লঙ্ঘ আকাঙ্খা উপেক্ষা করে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঐ ছলোছলো রৌদ্রে;

শূন্য লাগে; শূন্য লাগে।। পার্সীরা এ দেশ ছেড়ে চলে গ্যাছে।। কবেই।।
বুঝিনি, আমার যৌবন: শূন্য থালায় ফুটে আছো অসম আকাঙ্খা।।

যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।। মৃতমানুষের হাড়ে জাহাজ ভাসে অবোধ্য আশ্রয়ে।।


কৃষ্ণচূড়া এবঙ আদালত-১ 

ভ্রূণহত্যার দায় এড়াইনি।

ব্যথায় কাতর রাত্রির গোঙানী শুনে যারা ভয় পায়-‘নিদাঘ’ শব্দটি
তাদের জন্যই প্রযোজ্য হোক। হ্যাঁ, এখনো আমার
এক হাতে করোটির রোদ; দ্বিতীয় হাতে
নির্ভার সন্ধ্যা।

মান্যবর আদালত,
অন্তিম রায়ের কপি আমিও মানি।।
তবে মৃত্যু ছাড়া আর কোন পরোয়ানা মানতে বাধ্য নই।

সিঁধেল চুরি থেকে ভ্রূণহত্যা সমস্তই অপরাধ; ভেবে দেখুন
কবি না হলে আমিও ঠিক বিচারক হতে চেষ্টা করতাম;
কারণ তোমার তলদেশের সকল হত্যাকারীকে আমি চিনি।


কৃষ্ণচূড়া এবঙ আদালত-২

এই যেমন আমি স্বীকার করছি, ওই মেঘপুঞ্জে আমি রাত জেগে থাকি
এই যেমন আমি স্বীকার করছি, বাম হাতে তীর্যক রোদ ধরে রাখি

এখন আমার মনে পড়ছে ‘আধিয়ার’ শব্দটি।
যাবার আগে বলে যাই
কবোষ্ণের ফাঁসির আদেশ কি সম্ভব হবে পৃথিবীর কোন আদালতে?
তোমাকে বলছি, শোন, অস্থি জুড়ে আছো
দধীচি নই- তবু লাল আগুনে পুড়ে যাচ্ছি- বিজ্ঞাপনের প্রখর আলোই
যথেষ্ট ছিলো; চুম্বনে অনীহা কোন ফৌজদারি অপরাধ নয়
এটা তোমাকে বুঝতে হবে- যেমন আমার পাঠকেরা বোঝেন।

এই যে ‘আধিয়ার’ শব্দটি; এটা কি এই কবিতায় একটি বিশেষ
নৈর্বেক্তিকতা সৃষ্টি করছে না? তবে তুমি কেন
অভিন্ন হতে পারছ না মানবিক কৌটিল্য ভুলে;

কার নামে রাত জাগো? কে তোমাকে ইচ্ছা মৃত্যুর কথা
বলেছিলো প্রথম; যদি অস্বীকৃতি জানাও
এসব বলতে, তবে আমি কৃষ্ণচুড়ার বিবাদী পক্ষ হবো।


সায়মা হক

সায়মা হক। আমাদের অগ্রজ ছিলেন। সাদামাটা। আটপৌরে। আমরা তখন ১৮ দিকে যাচ্ছিলাম। তিনি ২৫ অতিক্রম করছিলেন। আর দূরে, চট্টগ্রামে, একজন সদ্য বিদায় দিলেন ৩১টি বসন্ত।

এভাবে কিছুদিন। ... আমরা পার করে যাচ্ছিলাম ১৮, ১৯ ...।

এভাবে অনেকদিন। আমাদের কুড়ি তখোন। সায়মা হক আগেই থেমে গেলেন ২৬ এ। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে যিনি আছেন, তিনি পঁয়ত্রিশতম বসন্ত উদযাপন করছিলেন অন্য ২৫ কে নিয়ে।


ভ্রমণ

আমি অই চুম্বনেষ্ণু ওষ্ঠাধরে তাক করে রেখেছি শরত
দ্রাবিড় সভ্যতা, বেগুনী শিশির, মধ্যাহ্নের মেঘ; ...
আমি তার আলোচনা সভায় বাগ্মিতা হয়ে উড়ছি বাতাসে;
প্রকৃতির মধ্যে প্রতিস্থাপিত হয়ে আছি, আমি তার
উদ্দীপ্ত আচরণ প্রত্যক্ষ হেতু জমিন হয়ে ছড়ায়ে গেছি জমিনে
ফসল হয়ে ফলন হয়ে আমি তার আদিগন্ত মুসকান

যে বেহালার বাদক আর ফিরে আসেনি
আমি সেই বেহলার সুর লিখে রেখেছি রাফ খাতায়-
আমি সেই দ্রাবিড়-পরাজয়ের মধ্যে
প্রোথিত হয়ে আছি সংশপ্তক ভ্রূণরূপে- ঊনবর্ষায়
‘অঝোর’ উপমা ফিরে আসেনি;- আমি টুকে রেখেছি
এইসব বিদায় আর প্রস্থানেচ্ছার অতিভোর
ভ্রমণের বিবিধ শলাকলা।। ... কুচাগ্রের প্রাণান্ত উত্থান


সূর্য মজেছে প্রেমে অসীম সাহসে

ঘুরে যায় ঘোড়া আশ্চর্য সাহসে- আমরা তখনো ঘুমে নিবন্ধিত;
সূর্য উঠে নিজে নিজে ডুবে যেতো, কত স্রোত- কত্তো স্রোতে
কত ধূলি উড়ে গ্যালো, কত খুরের শব্দে কালের ঘুম লেখা;
আমাদের নৃতত্ত্বে জমে আছে ক্ষয় ক্ষুধা, অতীত অতীত
সাপের মসৃণ ত্বকে দুধ্বর্ষ শীতল শোভার পিচ্ছিল অভিযোগে

এবার জাগছি আমি-আমরা- আহুত ঘোড়ার শব্দে।
একবার অনির্দিষ্ট ঘুমে খুইয়েছি সব প্রজাপতি,
ওড়াওড়ি লাল নীল হাওয়া; ধূলো পথে খুরেদের
স্বরলিপি- অতীতের ধ্বনিবোধে- পার্শ্ব চরিত্র, নিশ্চল
হয়ে যাবো হারিয়ে যাওয়া গ্রামের মতোন; নিশ্চই
মাটির ঢিবি অবিরাম ভাস্কর্য আমি- আমারই খুরের শব্দে,
খেদে, কালনদীতীরে সূর্য মজেছে প্রেমে অসীম সাহসে


স্বপ্নখোর ঘুমে

আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখার মতো-
সব চেয়ে ব্যস্ততম পথে গমনেচ্ছুক সাপেরা ভয় পেয়ে
নিখোঁজ হলো; আমি তাদের গল্প বলি।
কুমারীদের পোদের ওমখোর টিএসসির ছাড়পোকাটির
গল্প করি; নিউজপ্রিন্টের রগরগে জমানা যে দেখেনি।
কর্ণফুলির হলুদ পাতায় বেড়ে ওঠা ছারপোকার ছানা থেকে
কী করে সে টিএসসির কুমারীদের দখলে নিলো, সেই গল্প
বলি নিখোঁজ সাপেদের। ওরা সাহস পায়
কুকুরের বমির ঘ্রাণ ধরে ধরে ওরাও পৌঁছুতে চায়
শাহবাগ এলাকায়, নীলক্ষেতে, গুরুদুয়ার সাদা বিল্ডিংএ।

রমনা এলাকার একটি প্রজাপতি হঠাৎ গল্প জুড়ে দ্যায়
আমার ঘুমের সাথে; ফলে স্বপ্নটি অসমাপ্ত হয়ে ওঠে, এবং
আমি জানতে পারি সে আজ কার বক্ষে বসে
কার মুণ্ডু দেখেছে; ছায়ানটে নজরুল বেজে চলেন- এই
অভিযোগে আত্মহত্যা করা তানপুরায় বসবাসরত ঘুনপোকা
উদ্বাস্তু হলে প্রতিবাদে মুখর হয় ওমখোর টিএসসি।

আমি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সেঁকে স্বপ্ন বেলে খাই।



দুঃস্বপ্নজাত বিবিধ মুহূর্তে

এই যে আমি পুড়ে যাচ্ছি: কাঁচের প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করছি ডেকোরেটেড যকৃত- উপসনার মতো একে একে পালন করছি মৃত্যুলব্ধ অভিজ্ঞতা সমূহ- ছুরি, চশমা আর মাস্ক; এইসব গোপন করে এই যে আমি জন্ম দিয়েছি নিজের লাশ- ফরেনসিক ড্রয়ারের শীতল সময়ে আবদ্ধ হয়ে আছি; এই যে গোপনে ঈশ্বর এসে দেখা করে গেল, দু'এক টুকরো আলাপও হলো- আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা; এই যে আমি ধর্ষিত হচ্ছিলাম নবায়িত রৌদ্রে- এই যে আমার ওষ্ঠে চেপে বসেছিলো আরেকটি নির্মম ওষ্ঠ- এই যে আমার শিশ্ন পেঁচিয়ে ধরছিল একটি রসার্ত জিহ্বা- এই যে আমার পায়ুপথে সমকালিন শিল্পরসের মতো প্রবেশ করেছিলো কয়েকটি মাছি- এই যে আমি বারবার চিৎকার করে উঠছিলাম- আর নিজেকে পরিবেশন করছিলাম বিভিন্ন সিরামিক প্লেটে- আর কয়েকটি কাঁচের প্লেটে। আর প্লাস্টিকের জগে ধীরে ধীরে সুপেয় হয়ে উঠছিলাম বিদেশী মদের আগ্রহে; এই যে আমি প্রতিদিন টিভি সিরিয়ালে প্রদর্শিত হই অনিন্দ্য সুষমায়- এই যে আমি প্রতিদিন পেটিকোটের সুরক্ষায় নিবেদিত হই- এই যে আমি প্রতিদিন কর্বোলিক এসিডের ভয়ে মুষড়ে পড়ি

তাতে কতবার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল?

অথচ আমি অর্থহীন পুড়ে চলছি সন্ত্রাসী টায়ারের মতো- অথচ আমি বিভিন্ন ভোগের পাত্রে পরিবেশিত হতে হতে ক্লান্ত- অথচ আমি যকৃত সমান ভাবে ভাগ করে দিতে নতুন আইন প্রনোয়নে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হচ্ছিলাম।। আজকাল ফার্নিচার দোকানে কার্পেট, কর্পোরেট গন্ধি কৈশোর- অথচ আমি বিশ্বাস করে জন্ম নিয়েছিলাম মৃত্যুমূর্ত লাশ হয়ে
আমি বিশ্বাস করে নিজের টুটি চেপে ধরেছিলাম, টেনে জিভ ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, আমার চামড়া ভয়ে কুঁচকে থাকতো, গলে যাওয়া চোখ থেকে বেরিয়ে আসতো তিনদশকব্যাপী বিদ্রোহী আলোক রশ্মি; ড্রয়ারের প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শুয়ে শুয়ে আমার বুকের অনুচ্চতায় একটি ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস টের পেতাম- এসব কারণে আমার একটি সংক্ষিপ্ত সংস্কার আবশ্যিক হয়ে পড়েছিলো- অথচ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই সংস্কারের কথা ফাঁস করতে সবাই ব্যর্থ হয়েছে।
এই সম্মিলিত ব্যর্থতায় আমি পুড়ে গিয়েছিলাম। নবায়নের নিত্য তৃষ্ণায়।। আমার যকৃতের মধ্যে পুনরায় আমারই ভ্রূণ জন্ম নিচ্ছে। আমি পুনরায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবো, ঠিক, মাটিতে পাতা সংসারের মতো


প্রলেতারিয়েত

শীতের তীব্রতা ভুলে গিয়ে ঊনবর্ষায় ভিজছি;
না, বর্ষায় নয়, বৃষ্টিতে নয়
পৌর কর্পোরেশনের রুগ্ন আলোয় রাত জাগছি। হাঁটছি। পান করছি।
জেগে আছি আমরা ক’জনা বহুবিধ নৈশদৃশ্যের সাথে; অজর দৃশ্যেরা।
কোমায় চলে গ্যাছে তারা
যারা আর যারা শুভক্ষণ দেখে শুভাদের চোখে দেখেছিলো জীবন
যারা আর যারা গ্রন্থের কালো অক্ষরে প্লেটোদের চিনতেন
যারা আর যারা ঘুম আর নিদ্রায় আবহমান।।

পরান বাবুর লাইসেন্স করা মদের গেলাশ। গেলাশে এইসব দৃশ্যাবলী:
দৃশ্য : ১) সাতবার সমতলে ঘুরেছি- বললেন একজন মশা
দৃশ্য : ২) সুদীর্ঘ ছয় ইঞ্চিপথ নিরবিচ্ছিন্ন হেঁটেছি- জানালো তরুণতম চড়ুইটি
দৃশ্য : ৩) একটা গোটা টেবিলের লোভ সামলিয়েছি- জিহ্বা চাটতে চাটতে স্বগোক্তি করে চলছেন একজন ঘুঁনপোকা
দৃশ্য : ৪) ওকে আরেকটু শিক্ষা দেওয়া যেতো- এটা একজন সদ্য বিযুক্ত কুকুরের শীৎকার
দৃশ্য : ৫) এ নিয়ে কয়েকটি কবিতা লেখা সম্ভব- টলতে টলতে কবি জানালো সুরাসঙ্গী মুচিকে

আমাদের আর সব নাগরিক কোমায় আছেন; কেবল
পৌর কর্পোরেশনের সকরুণ আলোয় কবি আর মুচি
সুইপার পল্লীর ডাঁসা ডাঁসা ঝি
বিলবার্ডে ক্যাটরিনার হাসি
একজন বিমর্ষ ছাত্রী
দৃশ্য ও দৃশ্যকল্প
আমরা সবাই
ঊনবর্ষার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
শ্রেণী-বর্ণ-নির্বিশেষ
                জেগে আছি;


তোমার রাত্রিকে

১)
এই কঙক্রিটের জঙ্গলে ভালোবাসছো;
ধীরাজ সিংহের পুকুর পাড়ের চুনসুরকির
জলসায় প্রবল কামনা করছো
সন্ধ্যার মৃদু উষ্ণতায় মগ্নতা চাচ্ছো
গভীর রাতে ফোনরাখা বিরহে তার নাম জপছো
২)
আকাশকে আকাশ ভাবো উড়বার সাধ নিয়ে;
আমি ভাবি গুচ্ছগুচ্ছ আমারই ছায়া
কাতর মেঘের রোদন রাগে; তোমার আকাশ
মানে জানলার ঐ টুকরো রোদের বিষণœতা
৩)
তোমার দেবতাদের আমি বন্ধু; তাদের লালার
প্রতিবিম্বে বনান্তের ঘ্রাণ- মেঝেতে পড়ে থাকুক
অর্ঘ্য রাশি, প্রণামের ভাঁজ; তাকালেই দেখি
গাছের বিন্যাসে আমি আর আমি সিঁথিবনে
মেরুন অভিসম্পাতে ক্রমেই জেগে উঠছি
৪)
এ তো মনোবৈকল্য! কে কাকে স্পন্দিত করছে!
আমার পথ হাঁটায় যারা আছে বিচূর্ণ মাটি হয়ে
তারা কেউ আমার হবে না; বুদ্ধিহীন কবিতার
নির্গন্ধ বিন্যাস তোমাকে জাগিয়ে রাখে;
তোমার প্রযুক্ত বিষাদ, ধূর্তহাসির গোলাপি
ফ্রক, বিষাদমোহিত গলিত দৃষ্টি কোই?


স্খলনজনিত

ভূ-মধ্য সাগরে যতবার গেছি, অবোধ্য স্বরে ততোবার সৃজিছ ভাষা; কখনো যাই নাই এই কূল ছেড়ে দক্ষিণে উত্তরে; জেনেছি পূর্ব আর পশ্চিমে সূর্যের যাতায়াত। কোথায় মানুষের ঢল বেশী, কাদের পাশবিক উৎপাতে হরিণীরা কাঁপে- বিনয়ের নৈঃশব্দ্যজালে- দেখি নাই

জানি নাই শহরে এসে গ্যালো অজর রোদের দিন তরুণী পুলিশের মেঘভারে- শুনি নাই হিংসায় জ্বলে গ্যাছে মহিলা হোস্টেল- ২৪৫ নম্বর কক্ষের রঙ- নিবিষ্ট স্থপতি এক- জ্যামিতির লোভে সূত্রারোপ করেছি শুধু- শ্যামলেশ্যামলনীলনীলিমায় ভূ-মধ্য সাগরের সুপ্রকাশজল এনে দিলে- এমন বধির কানে আজ কত সুবর্ণ ভাষা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন