বুধবার, ২৫ মে, ২০১১

এক থেকে দশ

মধ্যরাতের নোট

তুমি জেগে থাকো মধ্যরাতের নোটে
ডেল কোম্পানির ক্ষয়িষ্ণু অক্ষরে।

আঙুলে যে পৃথিবীর জন্ম হয়
সবুজ অধীর
নীল, ঐকান্তিক;
মধ্যরাতে সেখানে ঝড় ওঠে
করুণ মসৃণ।
তুমি সেই পৃথিবী কখনো কখনো-
সমুদয় উপাদান হয়ে

কী বোর্ডে প্রবাহমান দশটি আঙুলে
তুমি জেগে থাকো আমাদের যন্ত্র-রাতে


আমি জেগে আছি

অবসাদ ঘিরে থাকে চেতনার রোদ
চিনলেই হয়, আমি জেগে আছি।
ফেরার সময় নেই কারো- আমার
কিম্বা তোমার; শুধু পরিচয় লাগে
তারপর সব নিজস্ব নিয়মেই হাঁটে
অবসাদ ঘিরে আছে, আমি জেগে আছি
চিনলেই হয়, রোদের শরীরে কত ক্ষয়

যে বাঁশি বেজেছে ধীরে, অল্প শিহরনে
সেই সুরে মন রাখো; মন-গহিনে, এমনি
হয়, মৃত্যুকে মনে পড়ছে তোমাকে নয়;

গানের আগে বাঁশুরীর ঝড় তুমি হয়ে আস
মেঘের কবলে রোদ, রোদে ভাসে জল;

জল দাও, জল দাও, স্নানাভাবে দাও
অধীর শীতল; যাবেইতো জানি সখী
এই জল রোদে মিশে বাষ্পের গানে;
জেগে আছি আমি তবু ভুল অভিসারে।


দুইটি কবিতা

১.(বিষপান)
সমুদ্র মন্থনে সুখ পাই- সুখ পাই আকন্ঠ পানে
অমৃতের লোভ নাই- জলের গভীরে বালুর রেখা
আচ্ছন্ন পানে দেখছি সাপ আর বেজি
মিলেমিশে গহিন সংসারে- হাস্যদীপ্ত;
সবুজ হৃদয়ের তরুনীরা সমুদ্র হতে চায়
ঠোঁটভরা বিষের থলি- আমি চুষে খাই
বিষভাণ্ডের বিষুব অঞ্চল।

২.(অভিমান)
অবুঝ পদ্য লিখে লিখে কত কাল হল ক্ষয়
কত প্রহর অযথাই কেটেছে অন্ধকারে একা
নীল বই পড়ে নিরর্থক করেছি ব্যয় কতো
ঘোরতর আবেগ। এইবার বৃষ্টি এলে শহরে
ভিজবো না দাঁড়িয়ে ছ’তলার বারান্দায়;
ইচ্ছে হলে হেঁটে যাবো নগরের পাশে দিয়ে
ইচ্ছে হলে ভাওয়ালের বনে পুঁতে দেবো
দ্রোহতম বীজ। তবু ভিজবো না আর।


দেওয়াল

তোমার সুশীতল ছায়াতলে
জেগে ওঠে উল্লাস-
ভাঙ্গে দেওয়াল, স্বপ্নের প্রতিমুখ;
তুমি ইঙ্গিতে ফোটাও ফুল
জলের তরঙ্গে আমার অভিবাসন

তুমি চেয়ে চেয়ে দেখ
চেয়ে দেখ সব নির্মম নির্বিকার

আমার উঠোনের সবটুকু স্বাপ্নিক রোদ
দু’ফোটা জলের দামে
চেয়ে নিয়ে হাসো মন্ময় ঢঙে
তুমি ইউটোপিয়ায় দেখ পৃথিবী
দেখ হাহাকার হয়ে গেছে গান


ধ্বনি

আমি তার অপেক্ষায় থাকি।।

সে শাওয়ার আর সেতারে
সমান স্পন্দিত হয়; হরিপ্রসাদ সম্প্রতি
এ দেশ ঘুরে গেলে
সে ধ্বনিত হয় রাখালী হাওয়ায়

আমি তার জন্য ইদানিঙ রাত জেগে থাকি-
একটি
    একটি
        করে রাত
সপ্তম সিম্ফনী সে আমার।।


একটি পুরোনো সম্পাদকীয়

আজ আমি একা নই; ফিরে দেখা ইতিহাসের মতো নির্বাসিতও নই। আমি প্রত্যুত্তরে অভ্যস্থ ভীষণ মাতাল এক। আমি একা নই। আমার একাকীত্বের কাছে তবু আজ বড় বেশী নিষ্ঠ।

ডান আঙুলের গোড়ায় সিকি শতাব্দি কালব্যাপি বেড়ে চলছে এক নিরর্থক আল্পনা। আমি তাকেও অমাবশ্যার মতো ভালো বেসে বেসে নদীর তরঙ্গে রেখে দিতে পারি। শুধু মধ্যমায় যে তিল ওৎ পেতে আছে তাকে কিছুতেই এড়াতে পারি না। বোধহয় কোনদিন পারবোও না।

আবেগের যেরকম কোন আভিধানিক নিয়ম নেই তেমনি আমিও চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্ন হতে দেখেছি চারটি আবিষ্ট রাস্তাকে। না, এখানে কোন পরাবাস্তবতা ছিল না; কোন বাস্তবতাও নয়; এক অধিবাস্তব আখ্যানের আড়ালে সূক্ষ্ম তন্তুর মতো বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছি শুধু। আমি। সমস্ত ঈশ্বরের একক প্রতিদ্বন্দ্বী।


কোন শোক সভা নয়

না, কোন শোক সভা নয়। স্নায়বিক দূরত্বে বসে একটি মিছিলের কথা লিখছি। প্রাণহীন জীবন থেকে যারা বিচ্যুত কিছুটা, তাদের কথা লিখছি। কথিত বৃষ্টিতে যারা প্রয়োজনীয় আহ্নিক জমিয়ে তোলেন, তাদের জন্য কোন শোক নেই। হে সভা, কোন শোক প্রস্তাব পাশ করার আগে অমরত্বের সনদ দাও। প্রথম জন্মের লজ্জা ভুলতে না ভুলতেই পরবর্তী মৃত্যু- কোন মানে নেই এই অসম জন্মের।


ব্যক্তিগত প্রত্নবিদ্যা
                
বেড়ে ওঠা ছাড়া আর কিছুই হতে পারিনি। তোমার দিকে তাকালেই সময়ের মানচিত্র দেখি, ভূগোল, ইতিহাস এবং ত্রিকোণমিতির ফলিত রূপ দেখি কী ভীষণ স্বচ্ছতায়। ছুঁয়ে দাও- অর্থ খুঁজে নেবো স্থবিরতার, হৃৎস্পন্দণের, ফুসফুসের অবিরাম পরিশ্রমী শিল্পের। কয়েকটি পোড়ামাটি এক করে জানিয়েছি আমরা জেনে গেছি পিতামহীর সপ্তকোটি নাম, করোটির মেঘ, চিবুকের সঠিক পরিমাপ; জেনে গেছি এখানে একদা গোপনে প্রোথিত ছিলেন কোন এক রজঃমানবী, তার কটিবন্ধের সুঘ্রাণ এখনো বর্তমান প্রতœবিভাগের পশ্চিম ঘরে। এ সত্য টের পাই তোমার ঘামঘন নিবিড় শীৎকারের মুহূর্তে- টের পাই, বাজির ঘোড়া কেবলি হেরে যায় এ সাতাশে এসেও তেমন


অপভ্রংশ শহরে অনস্তিত্ব বোধ

ধ্যানের মতো বসে আছে বালকেরা, কবে যাবে তুমি এই পথ দিয়ে?
সিঁড়ির গোড়ায় জেগে ওঠে বিলবোর্ড (সম্পূর্ণ রঙিন)
বালকের চোখে নেমে আসে প্রসন্ন রোদ।   


আমি ক্রমেই তোমাদের হয়ে যাচ্ছি। জবার মতো ফুটে আছো আনাচে কানাচে, গলির মোড়ে, ওভার ব্রিজের রেলিং ধরে জেব্রা ক্রসিং এ। মহানগরের গনগনে রোদে তোমাদের অম্লান ভঙ্গি, আহা, নির্ক্লান্তিলাস্যে লেবু পাতার রঙ। চুলে আর স্কার্টে বৃষ্টি ঝরে রাজপথে, নাগরিক চোখে। তোমাদের চোখে লাল-নীল জল, ঠোঁটে বহুজাতিক অভিনয়। আমি তোমাদের শতকে দাঁড়িয়ে তোমাদের হয়ে যাচ্ছি।

আমার সময় জুড়ে আপামর কুষ্ঠ রোগীর ঢল। পথে পথে ঘিনঘিনে বালিকারা আইসক্রীমের বায়নায় মত্ত। সূর্যের অশ্লীল রোদে ‘তাহাদের’ শরীর জ্বলে পুড়ে ছারখার। তোমাদের মতো নেই ‘তাহাদের’ নিভাঁজ ভাঁজ আর সুডৌল দ্বৈরথের মাঝখানে চিত্রকল্পময় অলৌকিক ড্রেন। আমার চামড়া ভেদ করে মগজ অবধি কর্পো-গাণিতিক অভিসন্ধ। তোমাদের আহ্বানে বধিরতা মেনেছি; বিলবোর্ডের নারীরা, আমি তোমাদের হয়ে যাচ্ছি।


ভুলমুদ্রা

বেহুলা, তোমার স্বপ্নে ছিল ভুল অন্ধকার। দেখ, বীজগণিত থেকে সরে এসে আমরা জ্যামিতি আর ত্রিকোনমিতিতে কী সুন্দর চিনে নিতে শিখেছি পথ- হিসাব কষে নির্ভুল। তুমি নদীতে নদীতে হাড়ের শব বয়ে নিয়ে গিয়েছ, খোঁপার গহিনে লেজ খন্ড বয়ে নিয়েও কোন উপপাদ্যেরই সঠিক প্রমাণে পৌঁছাতে পারোনি। না তুমি, না জীবন, কেউই বাঁচতে পারোনি। বেঁচে গ্যালো বামহাত সর্বস্ব চাঁদ। ইতিহাসে তার জাত্যাভিমানের নিপুণ জ্যামিতিক কাঠামোটি ঠিকই সুস্পষ্ট এখনো। সদম্ভে। তুমি বাঁচোনি। তোমার চোখে কোন ত্রিকোণমিতি জ্যামিতি তুমি আঁকতে পারোনি। তাই রূপকথায় এসেও সেই একই ভুল করো। ভুল মুদ্রায় নাচ লম্পট ইন্দ্রের সভায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন