তিতুমীর
আপনার নামে এখনো দুলে ওঠে বাঁশ ঝাড়
দুলে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ, কৃষকের চৌকষ কাস্তে
লাঠি আর লাঠিয়াল, দুলে ওঠে 'তাহ্বান্দ'।
মানুষের সংগ্রামে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় দুলে
ওঠে ঊনিশ শতক, নারকেলবাড়িয়ার ঘাস।
আপনার নাম ফরিদপুর,
নদিয়া অথবা চব্বিশ পরগনা।
আপনার পাঁচ হাজার ফিরে এসে হয়েছে
তিরিশ লক্ষ, আপনার নামে গান গায়
বাঙলার দোয়েল আজ।।
আপনি দুলে উঠুন, দুলে উঠুন আবার আমাদের মাঠে কঙক্রিটে
বৈরি হাওয়ায়। পলি জমে মুছে গ্যাছে-
ভাঙনের তোড়ে-
বিপন্ন হয়েছে আবার
আমাদের ঘর আমাদের গ্রাম।।
অন্ধ কোকিল
ধরো, আমি বেঁচে আছি তোমার শরীরের লতিয়ে ওঠা
শোকাবহ মৌন আয়োজনে; সুধী সমাবেশে-
রঙিন পানীয়র ঢেউ ওঠা গ্লাসের কিনারায়;
আমাকে আবহমান ভেবে যারা দিনরাত
দরজায় টোকা দিত, তাদের রোমাঞ্চ প্রবণ
খয়েরি আঙুলে ... ঘুম!
কাতর দৃষ্টির ছায়ায় মুখ ঢেকে
তুমি
ফিরে
যাচ্ছো ...
ফিরে যাচ্ছো;
ফিরে যাচ্ছো ল্যাম্পপোস্ট থেকে
রাতজাগা চিত্রকরের আরাধ্য অনিদ্রা থেকে
হৃদয়ের হলুদ আঙিনা থেকে কপোত চিৎকারে
জানলায় ঢেউ ওঠা দৃশ্য থেকে তুমি ফিরে যাচ্ছো
অমল ধবল জ্যোৎস্নায় শাড়ির মৈথুন তুলে;
পিতৃপুরুষের অভ্যাস থেকে ধরো আমি নিয়ে গেছি সাতাশটি কদাকার গুঁড়ি।
ধরো আমি মরে গেছি গোড়ালীর কালসিটে দাগে।
ধরো আমি এখনো বলে উঠি, অন্ধ কোকিল, আমি বসন্ত নই।
এখানে নির্জনতা ভর করে আছে; ট্রাফিক আইল্যান্ডগামী কংক্রিটগুলো
বেজে ওঠে ঝনঝনিয়ে... সব কবি চলে গ্যাছে এ শহর ছেড়ে। চলে গ্যাছে
তোমার নৈঃসঙ্গের ডাকে। তুমি এখন ২৫তম শ্বেতপদ্ম।
হেঁটে যাও
একা
একা
উড়ে উড়ে
শহর আগুন করে
ভুল বসন্তে
দেহের বার্নিশে
শোকের মতোন
গম্ভীর মৌনাভাসে
তীব্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে উদ্দাম কুয়াশায়
বৃষ্টির মতো ঝরে ঝরে পড়ো করোটির ম্লান রোদে
শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ
কতকাল পর সে আমাকে ডাকলো কফিনের ভেতর থেকে কর্পূরের গন্ধ মাখানো নামে।
বাইরের দুনিয়ার তাবৎ মুর্খরা তখোন স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে হাস্যকর জীবন যাপন করছিল; সে আমাকে ডাক দিল গাঢ় ঘুমে আচ্ছাদিত নাম ধরে। কিন্তু তার কণ্ঠস্বরের ভেতর আমি বন্দি হবার বদলে চর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেলাম; অতঃপর শিকারির চোখের মতো স্থির হলাম এবং মিশে গেলাম হিমায়িত রোদে। কতকাল পর আমি তাকে ছুঁয়ে দেখলাম-
কেউ জানতে পারেনি কফিনে নিদ্রিত শীতের নিঃরোদ উপাখ্যান; কেউ জানে না শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ। মুর্খরা নিরাপদে রাম নামে মত্তরোল ...।
শোক প্রস্তাব
জীবনের পতনসমূহ এখনো নিকটবর্তী নয় বলেই এই শোক প্রস্তাব।
খুব ছেলেবেলায় একটি টিয়াপাখির পতন দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা কয়েকজন জেনেছিলাম হত্যার জন্য মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু নিখুঁত টার্গেটে ট্রিগার টিপতে জানলেই হয়।
প্রিয় বন্ধুগণ, মধ্যদিন আসন্ন। প্রায় পৌঁছে গ্যাছি। এখনো নিজেকে নির্মম প্রহৃত ভাবতে পারছি না। অথচ, আপনারা, আমার সুহৃদজন, এমনকি শত্র“গণও, কী চমৎকার উপভোগ করে চলছেন নিজস্ব পতন।
মৃগয়া
আমি তার কিন্নর কণ্ঠ শুনতে পাই।। সে আমার নাভীদেশে হলুদ ফুলের সন্ধান করে বেড়ায়।। মৃত মৃগের অস্থির ভেতরে তলিয়ে যায় তার প্রসিদ্ধ যৌবন- রতিসংলাপ।।
আদ্যশক্তি, আর কত নিদ্রা যাবে? এবার আমার স্পর্শের প্রত্যুত্তর কর।। তোমার নক্ষত্র খচিত পাঁজর থেকে আমি তাকে মুক্ত হতে দেখেছি।। তার হাতে ক্রুশবিদ্ধ জেরুজালেম- উলঙ্গ যিশুর সামনে সুনীল শৈশবে বেড়ে উঠছে নিষ্পাপ জুডাস।।
দেবী, হে সিক্ত-যোনী মহামায়া, আমার নাভীমূলে প্রবল চুম্বন দাও- সে মৃত হরিণের মজ্জার ভেতরে জুডাসের গোপন দীর্ঘ রাত।।
জবা
ভোর থেকে ফুটে আছো। ভোরে থেকে তুমি আমাদের।।
আমি সম্ভবত হারিয়ে যাবো তোমার রক্ত গহ্বরে।
অতল
মৃত্যু থেকে মুখ ফিরিয়ে তোমার পঞ্চমোহনায় আশ্রয় চেয়েছি-
দাও; আমাকে তোমার অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও
নগরীর দীপ সঙক্রমিত হয়ে আছে গোপন ব্যাধিতে
দিন নেই রাত নেই আলোকিত সড়কগুলো হিংসায় দহে
আর কোন ঠাঁই নেই, অনির্বাসিত হয়ে আছি জরায়ু বরাবর
দীর্ঘ বৃন্তমূলে যৌনতা দেবো -পরাগায়নের নিশ্চয়তা-
অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও; ভোর থেকে ফুটে থাকা
নির্গন্ধ রূপসী, তোমাকে তুমুল সঙ্গমঘ্রাণ এনে দেবো
কয়েকটি পাখির ডাক ও অন্যান্য
আজ রাতে কয়েকটি পাখির ডাক শোনা যাবে তোমাদের তেমাথায়। সেখানে একটি গর্তের ভেতরে লুকানো রয়েছে আধেক গোধূলি রঙ। আজ রাতে গোধূলি দেখবেন যাঁরা, তাঁদের স্মৃতিমালা রক্ষিত হবে প্রতি শতকের রৌদ্রতম দিনে। অধরা, অদৃশ্য হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছি- আমায় শুষে নেবে শীতল আলখেল্লার গভীর কালো রঙ। নিঃশব্দ্যে।।
আর শেষতম দিনে আবার চন্দ্রোদয় হলে মুখোমুখি হবো আমরা দু'জনা। বাম আঙুল থেকে তুমি তুলে নেবে বস্তিবাসীর কুৎসিত সঙ্গম দৃশ্যরাজি। ঘৃণায় মুষড়ে পড়ার আগে জানাবে- বড় বেশী অপ্রমিত ছিল তোমার হাবভাব। সন্ধ্যার কিছু পর জেগে উঠবে গুটিকয় উদ্বিগ্ন মুখের সামনে; সেখানে আমার মুখমণ্ডলের কোন প্রবেশাধিকার থাকবে না আর। টিভি চ্যানেলগুলোর নতুন মুখের সন্ধানের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়া তরুণী, আমারও প্রেমিকা ছিলে তুমি।
কয়েটি ইঁদুর দৃশ্যের মতো দেয়াল থেকে ঝড়ে পড়তেই ভূ-মণ্ডলে নেমে আসে হিম ঋতু। অনভ্যস্থ তুষারপাতে ভরে যায় আমাদের নাতিশীতোষ্ণ মাঠের সবুজ। রঙ বদলে যায়, বদলে যায় অনুভূতির সংজ্ঞার মতোন। বিষণœ বিকেল মানে পড়ন্ত রোদের নিথর আলস্য নয়, এখন এখানে বরফের প্রাচুর্যে কোন অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে না আর- গভীর চাদর জড়িয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া
সেখানে কোন আগুন ছিলো না
সেখানে কোন আগুন ছিলো না, তবুও তারা জ্বলে উঠেছিল।। আমি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি; তাই চলে এসেছিলাম। পথের উল্টোদিকে তারপর ওরা জটলা ধরে ভীষণ অশ্লীল আচরণ শুরু করে দিয়েছিল। নিসর্গকে জবাই করে হত্যার পর গর্ধভগুলো হো হো করে হাসছিল, আর একটি হিজড়ার দাড়িয়ে প্রস্রাব করার দৃশ্যের দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকাচ্ছিলো যেন ওখানে সাদাকালো সুচিত্রা সেন উত্তম বাবুর সঙ্গে রোমান্টিক সংলাপে লিপ্ত। আমি এ দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না এরা এরকম নোংরা হতে পারে।
**
কার্যত তুমি আমাকে হারিয়ে দিয়েছ। চুম্বনের সময় ভাঙ্গা রিক্সায়ও যে পাখা গজায় তা তুমি না বললে আমি কখনোই জানতে পারতাম না। বলাৎকারকারী পুরুষ দণ্ডের অসুখে ভোগে। এপেন্ডিক্সের মতো ওটাও ফেলে দিলে ছেলেগুলোর এ রোগ সেরে যেতোÑ তোমার এ আক্ষেপে আমি মাটির সাথে মিশে যাই।
**
ভালোই হয়েছে আমি চলে এসেছিলাম, না হলে আমাকেও ভাল্লুকে খেতো। অই গর্ধভগুলোকে ভাল্লুকে খেয়েছিল। পরদিন সকালে আমি সে স্থানে কোন ছাই দেখতে পাইনি। কিন্তু নিজেকে খুব দণ্ডিত মনে হচ্ছিল।
**
আমি তাকে কোনদিন অভয় দিতে পারিনি। অথচ সে আগুন খুব ভালোবাসতো।
কবিগৃহের কবিতা
(কবিজন হাবীব ইমন করকমলে)
আপনিই থাকবেন উঁচুতে- জ্যোৎস্নায় বুক ভিজিয়ে- বৃষ্টির স্নেহে
রাতভর কবিতার উল্লাসে। আপনাকে ঘিরে থাকবে প্রমিত উপমার দল;
যেমন থাকে সবসময়। মস্তিষ্কের অবদমিত যৌন ক্রোধ থেকে খুঁটে খুঁটে
এক একটি অধীর শব্দ তুলে নিয়ে আসবেন শুভ্র বলাকার স্থৈর্যে;
আর স্বর্গ থেকে ইন্দ্রাদি দেবতাগণ পুষ্প বৃষ্টির মতোন আপনার জয়গানে
ছাদ জুড়ে পাঠাবেন মেনকার কুচমুদ্রার চিরযৌবনা রোদ
ধন্য আপনি, ধন্য আপনার মধু-অভিমান
আপনার গৃহের প্রহরীগণ নিপুন দক্ষ হাতে নিধন করে চলছে
প্রতিটি অ্যাটমিক অবাধ্য অন্ধকার শব্দকে। প্রবল প্রতিরোধের
মুখোমুখি স্যাডিজম এখনো আপনার অজর ব্যুহে।
জ্যোৎস্নাপ্রিয় কবির গৃহে অন্ধকারের কোন ঠাঁই নেই জেনেও
অবৈধ প্রবেশাধিকারী লজ্জিত মীনের জন্য অন্তত এক কোষ
ক্ষমার সলিল ছুঁড়ে দিন পশ্চিমের জানালায়--
কবিগৃহে সকলের প্রবেশাধিকার থাকতে নেই, একদিন বৃষ্টির বিকালে
এভাবেই আপনি একটি কবিতা লিখেছিলেন।।
অনুমতি দিন, আমি তার প্রথম বিমুগ্ধ পাঠক হই।।
তিনটি কবিতা
বিড়াল
বিআল, আমিও দুধ ভালোবাসতাম
শৈশবের নির্বিঘœ আলোয়
এখনো কাঁটা বিঁধে যায়- আনন্দের
নৈঃশব্দ্য শৃঙ্গারে ফুলে ওঠে বেদনার ব্লাউজ।
বিআল, আমাকে শেখাও মিঁআও মিঁআও ডাক
গেরস্থের পায়ের কাছে বসে ঘুমোবার সাধ
অনেক দিনের। মায়ানেকড়ের ঘেউ ঘেউ
শব্দ শুনে ক্লান্ত এখন; আমাকে শেখাও
কণ্টকের দ্রুত-নিঃশেষকরণ কলা
ইভ, তোমাকে বলছি
ইভ, তোমাকে বলছি, বাম পাঁজরে দগদগে ক্ষত;
যেন নিঃশব্দ কাশ্মীর- আর্তনাদ আর্তনাদে
চুড়া থেকে দরদর করে নেমে আসছে ঘাম
ভীষণ শীতল;
হাড়ের ভেতর সহিংস আগুন জ্বলেÑ
তোমার দুঃখ ছিপছিপে চিলির দৈর্ঘ্যরে থেকে দীর্ঘতর।
পাড়ি দিয়ে এসেছ হরপ্পা-মহেঞ্জদার
মায়ান ব্যাবীলন হয়ে জেরুজালেমের শুষ্ক ভূমি;
ইভ, আত্মবৈরী দ্রাবিড়ের
কৃষিজীবিতায় সন্তানের বেশে
জন্ম দিয়েছ শত্র“দল;
তৃতীয় কবিতা
বহু চিন্তায় ভরপুর এ করোটি;
স্কাউন্ড্রেল লাইটটা জ্বলে জ্বলে সার;
আমরা স্পর্শহীন থেকে যাবো
গগনবিদারী কামনায়।
এই দ্ব্যর্থতার হাত ধরে বসে থাকো
উইকি যুদ্ধে ধৃত যারা
অচিরেই মুক্তি পাবে সব-
তোমার হাসির পশ্চাতে তাদের মৃত্যু লিখে রেখেছি;
আপনার নামে এখনো দুলে ওঠে বাঁশ ঝাড়
দুলে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ, কৃষকের চৌকষ কাস্তে
লাঠি আর লাঠিয়াল, দুলে ওঠে 'তাহ্বান্দ'।
মানুষের সংগ্রামে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় দুলে
ওঠে ঊনিশ শতক, নারকেলবাড়িয়ার ঘাস।
আপনার নাম ফরিদপুর,
নদিয়া অথবা চব্বিশ পরগনা।
আপনার পাঁচ হাজার ফিরে এসে হয়েছে
তিরিশ লক্ষ, আপনার নামে গান গায়
বাঙলার দোয়েল আজ।।
আপনি দুলে উঠুন, দুলে উঠুন আবার আমাদের মাঠে কঙক্রিটে
বৈরি হাওয়ায়। পলি জমে মুছে গ্যাছে-
ভাঙনের তোড়ে-
বিপন্ন হয়েছে আবার
আমাদের ঘর আমাদের গ্রাম।।
অন্ধ কোকিল
ধরো, আমি বেঁচে আছি তোমার শরীরের লতিয়ে ওঠা
শোকাবহ মৌন আয়োজনে; সুধী সমাবেশে-
রঙিন পানীয়র ঢেউ ওঠা গ্লাসের কিনারায়;
আমাকে আবহমান ভেবে যারা দিনরাত
দরজায় টোকা দিত, তাদের রোমাঞ্চ প্রবণ
খয়েরি আঙুলে ... ঘুম!
কাতর দৃষ্টির ছায়ায় মুখ ঢেকে
তুমি
ফিরে
যাচ্ছো ...
ফিরে যাচ্ছো;
ফিরে যাচ্ছো ল্যাম্পপোস্ট থেকে
রাতজাগা চিত্রকরের আরাধ্য অনিদ্রা থেকে
হৃদয়ের হলুদ আঙিনা থেকে কপোত চিৎকারে
জানলায় ঢেউ ওঠা দৃশ্য থেকে তুমি ফিরে যাচ্ছো
অমল ধবল জ্যোৎস্নায় শাড়ির মৈথুন তুলে;
পিতৃপুরুষের অভ্যাস থেকে ধরো আমি নিয়ে গেছি সাতাশটি কদাকার গুঁড়ি।
ধরো আমি মরে গেছি গোড়ালীর কালসিটে দাগে।
ধরো আমি এখনো বলে উঠি, অন্ধ কোকিল, আমি বসন্ত নই।
এখানে নির্জনতা ভর করে আছে; ট্রাফিক আইল্যান্ডগামী কংক্রিটগুলো
বেজে ওঠে ঝনঝনিয়ে... সব কবি চলে গ্যাছে এ শহর ছেড়ে। চলে গ্যাছে
তোমার নৈঃসঙ্গের ডাকে। তুমি এখন ২৫তম শ্বেতপদ্ম।
হেঁটে যাও
একা
একা
উড়ে উড়ে
শহর আগুন করে
ভুল বসন্তে
দেহের বার্নিশে
শোকের মতোন
গম্ভীর মৌনাভাসে
তীব্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে উদ্দাম কুয়াশায়
বৃষ্টির মতো ঝরে ঝরে পড়ো করোটির ম্লান রোদে
শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ
কতকাল পর সে আমাকে ডাকলো কফিনের ভেতর থেকে কর্পূরের গন্ধ মাখানো নামে।
বাইরের দুনিয়ার তাবৎ মুর্খরা তখোন স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে হাস্যকর জীবন যাপন করছিল; সে আমাকে ডাক দিল গাঢ় ঘুমে আচ্ছাদিত নাম ধরে। কিন্তু তার কণ্ঠস্বরের ভেতর আমি বন্দি হবার বদলে চর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেলাম; অতঃপর শিকারির চোখের মতো স্থির হলাম এবং মিশে গেলাম হিমায়িত রোদে। কতকাল পর আমি তাকে ছুঁয়ে দেখলাম-
কেউ জানতে পারেনি কফিনে নিদ্রিত শীতের নিঃরোদ উপাখ্যান; কেউ জানে না শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ। মুর্খরা নিরাপদে রাম নামে মত্তরোল ...।
শোক প্রস্তাব
জীবনের পতনসমূহ এখনো নিকটবর্তী নয় বলেই এই শোক প্রস্তাব।
খুব ছেলেবেলায় একটি টিয়াপাখির পতন দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা কয়েকজন জেনেছিলাম হত্যার জন্য মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু নিখুঁত টার্গেটে ট্রিগার টিপতে জানলেই হয়।
প্রিয় বন্ধুগণ, মধ্যদিন আসন্ন। প্রায় পৌঁছে গ্যাছি। এখনো নিজেকে নির্মম প্রহৃত ভাবতে পারছি না। অথচ, আপনারা, আমার সুহৃদজন, এমনকি শত্র“গণও, কী চমৎকার উপভোগ করে চলছেন নিজস্ব পতন।
মৃগয়া
আমি তার কিন্নর কণ্ঠ শুনতে পাই।। সে আমার নাভীদেশে হলুদ ফুলের সন্ধান করে বেড়ায়।। মৃত মৃগের অস্থির ভেতরে তলিয়ে যায় তার প্রসিদ্ধ যৌবন- রতিসংলাপ।।
আদ্যশক্তি, আর কত নিদ্রা যাবে? এবার আমার স্পর্শের প্রত্যুত্তর কর।। তোমার নক্ষত্র খচিত পাঁজর থেকে আমি তাকে মুক্ত হতে দেখেছি।। তার হাতে ক্রুশবিদ্ধ জেরুজালেম- উলঙ্গ যিশুর সামনে সুনীল শৈশবে বেড়ে উঠছে নিষ্পাপ জুডাস।।
দেবী, হে সিক্ত-যোনী মহামায়া, আমার নাভীমূলে প্রবল চুম্বন দাও- সে মৃত হরিণের মজ্জার ভেতরে জুডাসের গোপন দীর্ঘ রাত।।
জবা
ভোর থেকে ফুটে আছো। ভোরে থেকে তুমি আমাদের।।
আমি সম্ভবত হারিয়ে যাবো তোমার রক্ত গহ্বরে।
অতল
মৃত্যু থেকে মুখ ফিরিয়ে তোমার পঞ্চমোহনায় আশ্রয় চেয়েছি-
দাও; আমাকে তোমার অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও
নগরীর দীপ সঙক্রমিত হয়ে আছে গোপন ব্যাধিতে
দিন নেই রাত নেই আলোকিত সড়কগুলো হিংসায় দহে
আর কোন ঠাঁই নেই, অনির্বাসিত হয়ে আছি জরায়ু বরাবর
দীর্ঘ বৃন্তমূলে যৌনতা দেবো -পরাগায়নের নিশ্চয়তা-
অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও; ভোর থেকে ফুটে থাকা
নির্গন্ধ রূপসী, তোমাকে তুমুল সঙ্গমঘ্রাণ এনে দেবো
কয়েকটি পাখির ডাক ও অন্যান্য
আজ রাতে কয়েকটি পাখির ডাক শোনা যাবে তোমাদের তেমাথায়। সেখানে একটি গর্তের ভেতরে লুকানো রয়েছে আধেক গোধূলি রঙ। আজ রাতে গোধূলি দেখবেন যাঁরা, তাঁদের স্মৃতিমালা রক্ষিত হবে প্রতি শতকের রৌদ্রতম দিনে। অধরা, অদৃশ্য হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছি- আমায় শুষে নেবে শীতল আলখেল্লার গভীর কালো রঙ। নিঃশব্দ্যে।।
আর শেষতম দিনে আবার চন্দ্রোদয় হলে মুখোমুখি হবো আমরা দু'জনা। বাম আঙুল থেকে তুমি তুলে নেবে বস্তিবাসীর কুৎসিত সঙ্গম দৃশ্যরাজি। ঘৃণায় মুষড়ে পড়ার আগে জানাবে- বড় বেশী অপ্রমিত ছিল তোমার হাবভাব। সন্ধ্যার কিছু পর জেগে উঠবে গুটিকয় উদ্বিগ্ন মুখের সামনে; সেখানে আমার মুখমণ্ডলের কোন প্রবেশাধিকার থাকবে না আর। টিভি চ্যানেলগুলোর নতুন মুখের সন্ধানের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়া তরুণী, আমারও প্রেমিকা ছিলে তুমি।
কয়েটি ইঁদুর দৃশ্যের মতো দেয়াল থেকে ঝড়ে পড়তেই ভূ-মণ্ডলে নেমে আসে হিম ঋতু। অনভ্যস্থ তুষারপাতে ভরে যায় আমাদের নাতিশীতোষ্ণ মাঠের সবুজ। রঙ বদলে যায়, বদলে যায় অনুভূতির সংজ্ঞার মতোন। বিষণœ বিকেল মানে পড়ন্ত রোদের নিথর আলস্য নয়, এখন এখানে বরফের প্রাচুর্যে কোন অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে না আর- গভীর চাদর জড়িয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া
সেখানে কোন আগুন ছিলো না
সেখানে কোন আগুন ছিলো না, তবুও তারা জ্বলে উঠেছিল।। আমি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি; তাই চলে এসেছিলাম। পথের উল্টোদিকে তারপর ওরা জটলা ধরে ভীষণ অশ্লীল আচরণ শুরু করে দিয়েছিল। নিসর্গকে জবাই করে হত্যার পর গর্ধভগুলো হো হো করে হাসছিল, আর একটি হিজড়ার দাড়িয়ে প্রস্রাব করার দৃশ্যের দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকাচ্ছিলো যেন ওখানে সাদাকালো সুচিত্রা সেন উত্তম বাবুর সঙ্গে রোমান্টিক সংলাপে লিপ্ত। আমি এ দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না এরা এরকম নোংরা হতে পারে।
**
কার্যত তুমি আমাকে হারিয়ে দিয়েছ। চুম্বনের সময় ভাঙ্গা রিক্সায়ও যে পাখা গজায় তা তুমি না বললে আমি কখনোই জানতে পারতাম না। বলাৎকারকারী পুরুষ দণ্ডের অসুখে ভোগে। এপেন্ডিক্সের মতো ওটাও ফেলে দিলে ছেলেগুলোর এ রোগ সেরে যেতোÑ তোমার এ আক্ষেপে আমি মাটির সাথে মিশে যাই।
**
ভালোই হয়েছে আমি চলে এসেছিলাম, না হলে আমাকেও ভাল্লুকে খেতো। অই গর্ধভগুলোকে ভাল্লুকে খেয়েছিল। পরদিন সকালে আমি সে স্থানে কোন ছাই দেখতে পাইনি। কিন্তু নিজেকে খুব দণ্ডিত মনে হচ্ছিল।
**
আমি তাকে কোনদিন অভয় দিতে পারিনি। অথচ সে আগুন খুব ভালোবাসতো।
কবিগৃহের কবিতা
(কবিজন হাবীব ইমন করকমলে)
আপনিই থাকবেন উঁচুতে- জ্যোৎস্নায় বুক ভিজিয়ে- বৃষ্টির স্নেহে
রাতভর কবিতার উল্লাসে। আপনাকে ঘিরে থাকবে প্রমিত উপমার দল;
যেমন থাকে সবসময়। মস্তিষ্কের অবদমিত যৌন ক্রোধ থেকে খুঁটে খুঁটে
এক একটি অধীর শব্দ তুলে নিয়ে আসবেন শুভ্র বলাকার স্থৈর্যে;
আর স্বর্গ থেকে ইন্দ্রাদি দেবতাগণ পুষ্প বৃষ্টির মতোন আপনার জয়গানে
ছাদ জুড়ে পাঠাবেন মেনকার কুচমুদ্রার চিরযৌবনা রোদ
ধন্য আপনি, ধন্য আপনার মধু-অভিমান
আপনার গৃহের প্রহরীগণ নিপুন দক্ষ হাতে নিধন করে চলছে
প্রতিটি অ্যাটমিক অবাধ্য অন্ধকার শব্দকে। প্রবল প্রতিরোধের
মুখোমুখি স্যাডিজম এখনো আপনার অজর ব্যুহে।
জ্যোৎস্নাপ্রিয় কবির গৃহে অন্ধকারের কোন ঠাঁই নেই জেনেও
অবৈধ প্রবেশাধিকারী লজ্জিত মীনের জন্য অন্তত এক কোষ
ক্ষমার সলিল ছুঁড়ে দিন পশ্চিমের জানালায়--
কবিগৃহে সকলের প্রবেশাধিকার থাকতে নেই, একদিন বৃষ্টির বিকালে
এভাবেই আপনি একটি কবিতা লিখেছিলেন।।
অনুমতি দিন, আমি তার প্রথম বিমুগ্ধ পাঠক হই।।
তিনটি কবিতা
বিড়াল
বিআল, আমিও দুধ ভালোবাসতাম
শৈশবের নির্বিঘœ আলোয়
এখনো কাঁটা বিঁধে যায়- আনন্দের
নৈঃশব্দ্য শৃঙ্গারে ফুলে ওঠে বেদনার ব্লাউজ।
বিআল, আমাকে শেখাও মিঁআও মিঁআও ডাক
গেরস্থের পায়ের কাছে বসে ঘুমোবার সাধ
অনেক দিনের। মায়ানেকড়ের ঘেউ ঘেউ
শব্দ শুনে ক্লান্ত এখন; আমাকে শেখাও
কণ্টকের দ্রুত-নিঃশেষকরণ কলা
ইভ, তোমাকে বলছি
ইভ, তোমাকে বলছি, বাম পাঁজরে দগদগে ক্ষত;
যেন নিঃশব্দ কাশ্মীর- আর্তনাদ আর্তনাদে
চুড়া থেকে দরদর করে নেমে আসছে ঘাম
ভীষণ শীতল;
হাড়ের ভেতর সহিংস আগুন জ্বলেÑ
তোমার দুঃখ ছিপছিপে চিলির দৈর্ঘ্যরে থেকে দীর্ঘতর।
পাড়ি দিয়ে এসেছ হরপ্পা-মহেঞ্জদার
মায়ান ব্যাবীলন হয়ে জেরুজালেমের শুষ্ক ভূমি;
ইভ, আত্মবৈরী দ্রাবিড়ের
কৃষিজীবিতায় সন্তানের বেশে
জন্ম দিয়েছ শত্র“দল;
তৃতীয় কবিতা
বহু চিন্তায় ভরপুর এ করোটি;
স্কাউন্ড্রেল লাইটটা জ্বলে জ্বলে সার;
আমরা স্পর্শহীন থেকে যাবো
গগনবিদারী কামনায়।
এই দ্ব্যর্থতার হাত ধরে বসে থাকো
উইকি যুদ্ধে ধৃত যারা
অচিরেই মুক্তি পাবে সব-
তোমার হাসির পশ্চাতে তাদের মৃত্যু লিখে রেখেছি;
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন