শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১১

বৃষ্টি বিষয়ক সিজোফ্রিনিয়া

প্রচন্ড ঝড়োতায় তোমার দেহপায়রা উড়ে গিয়ে
বসে শেষ কম্পার্টমেন্টে। বৃষ্টি বিষয়ক সিজোফ্রিনিয়া
স্টেশনে স্থির বসে থাকে। তুমি চলে যাও অঝোর
মালগাড়ির তীব্র আলোর দৃশ্যান্তরে;
হারানো বিজ্ঞপ্তি সাঁটা হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে
হারবাল কোম্পানীর সমস্ত স্টিকারে-হ্যন্ডবিলে
রঙিন পোস্টারের মৌণ যৌন আর্দ্রতায়-

ঝরছে সোনার মতো তোমার অবিনশ্বর চুলের সাপ
ইস্পাতে পিষ্ট রোদের জটিল গোপন ব্যধি;
স্টেশানরোডের হাওয়া মিশে যাচ্ছে মেঘেদের ক্ষয়রোগ
পড়ে যাচ্ছে সবগুলো শার্টার পরজীবি চুলের দৃশ্যকল্পে;
খয়েরি টিনের শব্দমাতাল বিস্ময়, টিকিটের ধূধূ হাহাকার
চলে যাও সমান্তরাল বৈকুণ্ঠের তরলে—
স্থিরতা জানে, কুয়াশায় ঢেকে যাবে তোমার গমনপথ
স্টেশানের সবগুলো বেঞ্চি গভীর কোন আভিঘাতে একদিন

বুধবার, ১ জুন, ২০১১

ইস্টিশনের বিষ্টি


আমরা পার করছি আর্দ্র সময়;
বিশাল হাতির মতো ট্রেইন আসে ধীরে মুষলবৃষ্টিতে
জীবন ফিরে পায় স্টেশান; তুমুল হর্ষ তুলে মালগাড়ী
থেমে পড়ে লৌহকংক্রিটে।
তুমি আমি দর্শকবিন্দুতে বসে দেখছি
ত্রিশ মের বৃষ্টিরাশি পড়ছে অতিকায় ট্রেনে
ধাতব সংঘর্ষ ছাপিয়ে বৃষ্টিশব্দে মুখর হয়
আমাদের স্টেশান, স্মৃতিকাতর দ্বৈত আচরন

বিপুল ধ্বনিধর্ষন করে চলে গ্যালে ট্রেইন
বিমর্ষ পেয়ালারা পিরিচের উপর বসে ঢলাঢলি করে।
আমি তিরিশ বছর পুরোনো জন্মকল্পের দিকে ফিরে তাকাই
তোমার দেহপায়রার উপর অবিরল ঝরে চলে বৃষ্টির পয়ার

বুধবার, ২৫ মে, ২০১১

হাইওয়ে পুলিশ


নেভীব্লু গাড়ীতে আপনারা উড়ে যান কালোরাস্তায়
স্থির ট্রাফিকের ভীড়ে দুর্বোধ্য ভঙ্গিমায়
প্রতিটি লেন ধরে তাকিয়ে আছি আমরা যাত্রীসাধারন
মহিলাসীটের আইনী গেঞ্জামে আমোদিত, ঘামে ক্লেশে
পথচারী জেব্রাক্রসিং স্পিডব্রেকার কন্ডাক্টার      আমরা সবাই  অনুমানে
                                                                সাইরেন শুনে
                                                                                     সতর্ক
সন্দেহভর্তি আমাদের হাত ব্যাগ                   ব্রিফকেস    
                                                               মানিব্যগে        ধূসর অনুভূতি
খয়েরখোর চালকের ঢুলুঢুলু চোখ রাস্তা গড়িয়ে চলে যেতে চায় পাঠক্ষেতে
আমাদের মেয়েরা শাড়ি পড়ে আছে               তাদের হাতে নেলপলিশরঙ
তাদের বমিলাগা অভিযোগ                          দয়া করে        শুনে যান        
আপনারা জীপগাড়িতে                                বসে বসে        তারপর ঘুমান                                           
                                                               জনাব             হাইওয়ে পুলিশ

একত্রিশ থেকে বেয়াল্লিশ

রুপালী চোখ, আগুন আর বাম বাহুর টিকার দাগ

এখনো স্মৃতিভ্রষ্ট হই নাই।

পুকুরের ঢেউয়ে বালিশ সাজায়ে রাখা অন্যায় হবে- এরকমই বিধান ছিলো আমাদের শৈশবে; মানে মাননীয় এরশাদ যখন বন্যার পানিতে নেমে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে পোজ দিতেছিলেন।

এরকম শৈশব সবার আসে না। এরকম ডাহুক শিকার সবাই পারে না।
ফাঁদ পেতে বসে থাকতে হয় সুদীর্ঘকাল-

ছোট্ট একটা মাছের কথা এখনো মনে আছে; আধডুবো ধানের ভিতরে আশৈশব বসে থেকে মাছটির চোখের রূপালী রঙ চিনতে পেরেছিলাম। রূপালী পর্দার মতো ক্লাইমেক্সে ভরপুর সাঁতার প্রতিযোগীতা চলতেছিলো তখোন সেই চোখে।

মাসকালাই গাছের ডালে টিয়ে যখন কামরাঙা খোঁজে
তখন বুঝতে হয় অনর্থ হয়ে গ্যাছে কোথাও; কোথায়?
হাফপ্যান্টের পকেটে এসবের কোন উত্তর থাকতো না।

মালতি। আমাদের মধ্যে তুইতো সবচে' ভালো সাপলুডু খেলতি। সেজন্যই কি ওঝা সর্দার তোকে গোপন করেছিলো এক রাতের জন্য।। ফিরে এসে আর কোনদিন লুডুর বোর্ডে হাত দিসনি। এবং তারপর থেকে তুই আগুন ভালোবাসতি খুউব। আমি জানতাম; আমরা দেখেছিলাম এক ভোরে আগুনের সাথে তোর ভষ্মদীর্ণ মিলন ছাই।

আমাকে কি তোর মনে আছে আফিয়া বানু? অন্ধচোখে কিভাবে স্বপ্ন দেখা যায়, আমাকে শেখাবি? আফিয়া, আফিয়া লো, তুইও শেষমেশ শিখে গেলি নাগরিক নিঃশ্বাস! ভুলে গেলি ভালোবাসার মতো আর কিছুই ছিলো না তোর, কেবল বাম বাহুর জ্বলজ্বলে টিকার দাগ ছাড়া- একটি নীরব কিশোর যার পাণিপ্রার্থী ছিলো।

কতটা উচ্ছন্নে গেলে মালতির স্বপ্নে সুরেশ নেমে আসে?
কতটা উচ্ছন্নে গেলে সুরেশের চোখে আফিয়ার স্বপ্ন দেখা যায়?
...
কলসেন্টারের কোকিল কণ্ঠীরা উত্তরহীন; নিঃশব্দে কাঁদেÑ জুন এর রোদের দুপুরে সড়কের পাশ ঘেঁষে বসে থাকা কুমোরের মাটির হাড়িতে এইসব শৈশব রক্ষিত আছে জেনে।।


কোথায় পাবো তারে

কোথাও মিশ খাওয়াতে পারছি না। যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।।

গীর্জার ঘণ্টাধ্বনি সেই কবে শুনেছিলাম, ওদের মেয়ের নাম ছিলো সেলিনা ডি কস্ট্রা; কেমন কোকড়ানো চুল ছিল, ঠোঁট ভরা অযুত আঙুর - আমাকে বলেছিলো- নেবে? হৃদয়ের দূর্লঙ্ঘ আকাঙ্খা উপেক্ষা করে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঐ ছলোছলো রৌদ্রে;

শূন্য লাগে; শূন্য লাগে।। পার্সীরা এ দেশ ছেড়ে চলে গ্যাছে।। কবেই।।
বুঝিনি, আমার যৌবন: শূন্য থালায় ফুটে আছো অসম আকাঙ্খা।।

যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।। মৃতমানুষের হাড়ে জাহাজ ভাসে অবোধ্য আশ্রয়ে।।


কৃষ্ণচূড়া এবঙ আদালত-১ 

ভ্রূণহত্যার দায় এড়াইনি।

ব্যথায় কাতর রাত্রির গোঙানী শুনে যারা ভয় পায়-‘নিদাঘ’ শব্দটি
তাদের জন্যই প্রযোজ্য হোক। হ্যাঁ, এখনো আমার
এক হাতে করোটির রোদ; দ্বিতীয় হাতে
নির্ভার সন্ধ্যা।

মান্যবর আদালত,
অন্তিম রায়ের কপি আমিও মানি।।
তবে মৃত্যু ছাড়া আর কোন পরোয়ানা মানতে বাধ্য নই।

সিঁধেল চুরি থেকে ভ্রূণহত্যা সমস্তই অপরাধ; ভেবে দেখুন
কবি না হলে আমিও ঠিক বিচারক হতে চেষ্টা করতাম;
কারণ তোমার তলদেশের সকল হত্যাকারীকে আমি চিনি।


কৃষ্ণচূড়া এবঙ আদালত-২

এই যেমন আমি স্বীকার করছি, ওই মেঘপুঞ্জে আমি রাত জেগে থাকি
এই যেমন আমি স্বীকার করছি, বাম হাতে তীর্যক রোদ ধরে রাখি

এখন আমার মনে পড়ছে ‘আধিয়ার’ শব্দটি।
যাবার আগে বলে যাই
কবোষ্ণের ফাঁসির আদেশ কি সম্ভব হবে পৃথিবীর কোন আদালতে?
তোমাকে বলছি, শোন, অস্থি জুড়ে আছো
দধীচি নই- তবু লাল আগুনে পুড়ে যাচ্ছি- বিজ্ঞাপনের প্রখর আলোই
যথেষ্ট ছিলো; চুম্বনে অনীহা কোন ফৌজদারি অপরাধ নয়
এটা তোমাকে বুঝতে হবে- যেমন আমার পাঠকেরা বোঝেন।

এই যে ‘আধিয়ার’ শব্দটি; এটা কি এই কবিতায় একটি বিশেষ
নৈর্বেক্তিকতা সৃষ্টি করছে না? তবে তুমি কেন
অভিন্ন হতে পারছ না মানবিক কৌটিল্য ভুলে;

কার নামে রাত জাগো? কে তোমাকে ইচ্ছা মৃত্যুর কথা
বলেছিলো প্রথম; যদি অস্বীকৃতি জানাও
এসব বলতে, তবে আমি কৃষ্ণচুড়ার বিবাদী পক্ষ হবো।


সায়মা হক

সায়মা হক। আমাদের অগ্রজ ছিলেন। সাদামাটা। আটপৌরে। আমরা তখন ১৮ দিকে যাচ্ছিলাম। তিনি ২৫ অতিক্রম করছিলেন। আর দূরে, চট্টগ্রামে, একজন সদ্য বিদায় দিলেন ৩১টি বসন্ত।

এভাবে কিছুদিন। ... আমরা পার করে যাচ্ছিলাম ১৮, ১৯ ...।

এভাবে অনেকদিন। আমাদের কুড়ি তখোন। সায়মা হক আগেই থেমে গেলেন ২৬ এ। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে যিনি আছেন, তিনি পঁয়ত্রিশতম বসন্ত উদযাপন করছিলেন অন্য ২৫ কে নিয়ে।


ভ্রমণ

আমি অই চুম্বনেষ্ণু ওষ্ঠাধরে তাক করে রেখেছি শরত
দ্রাবিড় সভ্যতা, বেগুনী শিশির, মধ্যাহ্নের মেঘ; ...
আমি তার আলোচনা সভায় বাগ্মিতা হয়ে উড়ছি বাতাসে;
প্রকৃতির মধ্যে প্রতিস্থাপিত হয়ে আছি, আমি তার
উদ্দীপ্ত আচরণ প্রত্যক্ষ হেতু জমিন হয়ে ছড়ায়ে গেছি জমিনে
ফসল হয়ে ফলন হয়ে আমি তার আদিগন্ত মুসকান

যে বেহালার বাদক আর ফিরে আসেনি
আমি সেই বেহলার সুর লিখে রেখেছি রাফ খাতায়-
আমি সেই দ্রাবিড়-পরাজয়ের মধ্যে
প্রোথিত হয়ে আছি সংশপ্তক ভ্রূণরূপে- ঊনবর্ষায়
‘অঝোর’ উপমা ফিরে আসেনি;- আমি টুকে রেখেছি
এইসব বিদায় আর প্রস্থানেচ্ছার অতিভোর
ভ্রমণের বিবিধ শলাকলা।। ... কুচাগ্রের প্রাণান্ত উত্থান


সূর্য মজেছে প্রেমে অসীম সাহসে

ঘুরে যায় ঘোড়া আশ্চর্য সাহসে- আমরা তখনো ঘুমে নিবন্ধিত;
সূর্য উঠে নিজে নিজে ডুবে যেতো, কত স্রোত- কত্তো স্রোতে
কত ধূলি উড়ে গ্যালো, কত খুরের শব্দে কালের ঘুম লেখা;
আমাদের নৃতত্ত্বে জমে আছে ক্ষয় ক্ষুধা, অতীত অতীত
সাপের মসৃণ ত্বকে দুধ্বর্ষ শীতল শোভার পিচ্ছিল অভিযোগে

এবার জাগছি আমি-আমরা- আহুত ঘোড়ার শব্দে।
একবার অনির্দিষ্ট ঘুমে খুইয়েছি সব প্রজাপতি,
ওড়াওড়ি লাল নীল হাওয়া; ধূলো পথে খুরেদের
স্বরলিপি- অতীতের ধ্বনিবোধে- পার্শ্ব চরিত্র, নিশ্চল
হয়ে যাবো হারিয়ে যাওয়া গ্রামের মতোন; নিশ্চই
মাটির ঢিবি অবিরাম ভাস্কর্য আমি- আমারই খুরের শব্দে,
খেদে, কালনদীতীরে সূর্য মজেছে প্রেমে অসীম সাহসে


স্বপ্নখোর ঘুমে

আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখার মতো-
সব চেয়ে ব্যস্ততম পথে গমনেচ্ছুক সাপেরা ভয় পেয়ে
নিখোঁজ হলো; আমি তাদের গল্প বলি।
কুমারীদের পোদের ওমখোর টিএসসির ছাড়পোকাটির
গল্প করি; নিউজপ্রিন্টের রগরগে জমানা যে দেখেনি।
কর্ণফুলির হলুদ পাতায় বেড়ে ওঠা ছারপোকার ছানা থেকে
কী করে সে টিএসসির কুমারীদের দখলে নিলো, সেই গল্প
বলি নিখোঁজ সাপেদের। ওরা সাহস পায়
কুকুরের বমির ঘ্রাণ ধরে ধরে ওরাও পৌঁছুতে চায়
শাহবাগ এলাকায়, নীলক্ষেতে, গুরুদুয়ার সাদা বিল্ডিংএ।

রমনা এলাকার একটি প্রজাপতি হঠাৎ গল্প জুড়ে দ্যায়
আমার ঘুমের সাথে; ফলে স্বপ্নটি অসমাপ্ত হয়ে ওঠে, এবং
আমি জানতে পারি সে আজ কার বক্ষে বসে
কার মুণ্ডু দেখেছে; ছায়ানটে নজরুল বেজে চলেন- এই
অভিযোগে আত্মহত্যা করা তানপুরায় বসবাসরত ঘুনপোকা
উদ্বাস্তু হলে প্রতিবাদে মুখর হয় ওমখোর টিএসসি।

আমি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সেঁকে স্বপ্ন বেলে খাই।



দুঃস্বপ্নজাত বিবিধ মুহূর্তে

এই যে আমি পুড়ে যাচ্ছি: কাঁচের প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করছি ডেকোরেটেড যকৃত- উপসনার মতো একে একে পালন করছি মৃত্যুলব্ধ অভিজ্ঞতা সমূহ- ছুরি, চশমা আর মাস্ক; এইসব গোপন করে এই যে আমি জন্ম দিয়েছি নিজের লাশ- ফরেনসিক ড্রয়ারের শীতল সময়ে আবদ্ধ হয়ে আছি; এই যে গোপনে ঈশ্বর এসে দেখা করে গেল, দু'এক টুকরো আলাপও হলো- আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা; এই যে আমি ধর্ষিত হচ্ছিলাম নবায়িত রৌদ্রে- এই যে আমার ওষ্ঠে চেপে বসেছিলো আরেকটি নির্মম ওষ্ঠ- এই যে আমার শিশ্ন পেঁচিয়ে ধরছিল একটি রসার্ত জিহ্বা- এই যে আমার পায়ুপথে সমকালিন শিল্পরসের মতো প্রবেশ করেছিলো কয়েকটি মাছি- এই যে আমি বারবার চিৎকার করে উঠছিলাম- আর নিজেকে পরিবেশন করছিলাম বিভিন্ন সিরামিক প্লেটে- আর কয়েকটি কাঁচের প্লেটে। আর প্লাস্টিকের জগে ধীরে ধীরে সুপেয় হয়ে উঠছিলাম বিদেশী মদের আগ্রহে; এই যে আমি প্রতিদিন টিভি সিরিয়ালে প্রদর্শিত হই অনিন্দ্য সুষমায়- এই যে আমি প্রতিদিন পেটিকোটের সুরক্ষায় নিবেদিত হই- এই যে আমি প্রতিদিন কর্বোলিক এসিডের ভয়ে মুষড়ে পড়ি

তাতে কতবার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল?

অথচ আমি অর্থহীন পুড়ে চলছি সন্ত্রাসী টায়ারের মতো- অথচ আমি বিভিন্ন ভোগের পাত্রে পরিবেশিত হতে হতে ক্লান্ত- অথচ আমি যকৃত সমান ভাবে ভাগ করে দিতে নতুন আইন প্রনোয়নে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হচ্ছিলাম।। আজকাল ফার্নিচার দোকানে কার্পেট, কর্পোরেট গন্ধি কৈশোর- অথচ আমি বিশ্বাস করে জন্ম নিয়েছিলাম মৃত্যুমূর্ত লাশ হয়ে
আমি বিশ্বাস করে নিজের টুটি চেপে ধরেছিলাম, টেনে জিভ ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, আমার চামড়া ভয়ে কুঁচকে থাকতো, গলে যাওয়া চোখ থেকে বেরিয়ে আসতো তিনদশকব্যাপী বিদ্রোহী আলোক রশ্মি; ড্রয়ারের প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শুয়ে শুয়ে আমার বুকের অনুচ্চতায় একটি ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস টের পেতাম- এসব কারণে আমার একটি সংক্ষিপ্ত সংস্কার আবশ্যিক হয়ে পড়েছিলো- অথচ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই সংস্কারের কথা ফাঁস করতে সবাই ব্যর্থ হয়েছে।
এই সম্মিলিত ব্যর্থতায় আমি পুড়ে গিয়েছিলাম। নবায়নের নিত্য তৃষ্ণায়।। আমার যকৃতের মধ্যে পুনরায় আমারই ভ্রূণ জন্ম নিচ্ছে। আমি পুনরায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবো, ঠিক, মাটিতে পাতা সংসারের মতো


প্রলেতারিয়েত

শীতের তীব্রতা ভুলে গিয়ে ঊনবর্ষায় ভিজছি;
না, বর্ষায় নয়, বৃষ্টিতে নয়
পৌর কর্পোরেশনের রুগ্ন আলোয় রাত জাগছি। হাঁটছি। পান করছি।
জেগে আছি আমরা ক’জনা বহুবিধ নৈশদৃশ্যের সাথে; অজর দৃশ্যেরা।
কোমায় চলে গ্যাছে তারা
যারা আর যারা শুভক্ষণ দেখে শুভাদের চোখে দেখেছিলো জীবন
যারা আর যারা গ্রন্থের কালো অক্ষরে প্লেটোদের চিনতেন
যারা আর যারা ঘুম আর নিদ্রায় আবহমান।।

পরান বাবুর লাইসেন্স করা মদের গেলাশ। গেলাশে এইসব দৃশ্যাবলী:
দৃশ্য : ১) সাতবার সমতলে ঘুরেছি- বললেন একজন মশা
দৃশ্য : ২) সুদীর্ঘ ছয় ইঞ্চিপথ নিরবিচ্ছিন্ন হেঁটেছি- জানালো তরুণতম চড়ুইটি
দৃশ্য : ৩) একটা গোটা টেবিলের লোভ সামলিয়েছি- জিহ্বা চাটতে চাটতে স্বগোক্তি করে চলছেন একজন ঘুঁনপোকা
দৃশ্য : ৪) ওকে আরেকটু শিক্ষা দেওয়া যেতো- এটা একজন সদ্য বিযুক্ত কুকুরের শীৎকার
দৃশ্য : ৫) এ নিয়ে কয়েকটি কবিতা লেখা সম্ভব- টলতে টলতে কবি জানালো সুরাসঙ্গী মুচিকে

আমাদের আর সব নাগরিক কোমায় আছেন; কেবল
পৌর কর্পোরেশনের সকরুণ আলোয় কবি আর মুচি
সুইপার পল্লীর ডাঁসা ডাঁসা ঝি
বিলবার্ডে ক্যাটরিনার হাসি
একজন বিমর্ষ ছাত্রী
দৃশ্য ও দৃশ্যকল্প
আমরা সবাই
ঊনবর্ষার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
শ্রেণী-বর্ণ-নির্বিশেষ
                জেগে আছি;


তোমার রাত্রিকে

১)
এই কঙক্রিটের জঙ্গলে ভালোবাসছো;
ধীরাজ সিংহের পুকুর পাড়ের চুনসুরকির
জলসায় প্রবল কামনা করছো
সন্ধ্যার মৃদু উষ্ণতায় মগ্নতা চাচ্ছো
গভীর রাতে ফোনরাখা বিরহে তার নাম জপছো
২)
আকাশকে আকাশ ভাবো উড়বার সাধ নিয়ে;
আমি ভাবি গুচ্ছগুচ্ছ আমারই ছায়া
কাতর মেঘের রোদন রাগে; তোমার আকাশ
মানে জানলার ঐ টুকরো রোদের বিষণœতা
৩)
তোমার দেবতাদের আমি বন্ধু; তাদের লালার
প্রতিবিম্বে বনান্তের ঘ্রাণ- মেঝেতে পড়ে থাকুক
অর্ঘ্য রাশি, প্রণামের ভাঁজ; তাকালেই দেখি
গাছের বিন্যাসে আমি আর আমি সিঁথিবনে
মেরুন অভিসম্পাতে ক্রমেই জেগে উঠছি
৪)
এ তো মনোবৈকল্য! কে কাকে স্পন্দিত করছে!
আমার পথ হাঁটায় যারা আছে বিচূর্ণ মাটি হয়ে
তারা কেউ আমার হবে না; বুদ্ধিহীন কবিতার
নির্গন্ধ বিন্যাস তোমাকে জাগিয়ে রাখে;
তোমার প্রযুক্ত বিষাদ, ধূর্তহাসির গোলাপি
ফ্রক, বিষাদমোহিত গলিত দৃষ্টি কোই?


স্খলনজনিত

ভূ-মধ্য সাগরে যতবার গেছি, অবোধ্য স্বরে ততোবার সৃজিছ ভাষা; কখনো যাই নাই এই কূল ছেড়ে দক্ষিণে উত্তরে; জেনেছি পূর্ব আর পশ্চিমে সূর্যের যাতায়াত। কোথায় মানুষের ঢল বেশী, কাদের পাশবিক উৎপাতে হরিণীরা কাঁপে- বিনয়ের নৈঃশব্দ্যজালে- দেখি নাই

জানি নাই শহরে এসে গ্যালো অজর রোদের দিন তরুণী পুলিশের মেঘভারে- শুনি নাই হিংসায় জ্বলে গ্যাছে মহিলা হোস্টেল- ২৪৫ নম্বর কক্ষের রঙ- নিবিষ্ট স্থপতি এক- জ্যামিতির লোভে সূত্রারোপ করেছি শুধু- শ্যামলেশ্যামলনীলনীলিমায় ভূ-মধ্য সাগরের সুপ্রকাশজল এনে দিলে- এমন বধির কানে আজ কত সুবর্ণ ভাষা

একুশ থেকে ত্রিশ

তিতুমীর

আপনার নামে এখনো দুলে ওঠে বাঁশ ঝাড়
দুলে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ, কৃষকের চৌকষ কাস্তে
লাঠি আর লাঠিয়াল, দুলে ওঠে 'তাহ্বান্দ'।
মানুষের সংগ্রামে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় দুলে
ওঠে ঊনিশ শতক, নারকেলবাড়িয়ার ঘাস।

আপনার নাম ফরিদপুর,
নদিয়া অথবা চব্বিশ পরগনা।
আপনার পাঁচ হাজার ফিরে এসে হয়েছে
তিরিশ লক্ষ, আপনার নামে গান গায়
বাঙলার দোয়েল আজ।।

আপনি দুলে উঠুন, দুলে উঠুন আবার আমাদের মাঠে কঙক্রিটে
বৈরি হাওয়ায়। পলি জমে মুছে গ্যাছে-
ভাঙনের তোড়ে-
বিপন্ন হয়েছে আবার
আমাদের ঘর আমাদের গ্রাম।।

অন্ধ কোকিল

ধরো, আমি বেঁচে আছি তোমার শরীরের লতিয়ে ওঠা
শোকাবহ মৌন আয়োজনে; সুধী সমাবেশে-
রঙিন পানীয়র ঢেউ ওঠা গ্লাসের কিনারায়;
আমাকে আবহমান ভেবে যারা দিনরাত
দরজায় টোকা দিত, তাদের রোমাঞ্চ প্রবণ
খয়েরি আঙুলে ... ঘুম!

কাতর দৃষ্টির ছায়ায় মুখ ঢেকে
তুমি
ফিরে
যাচ্ছো ...
ফিরে যাচ্ছো;
ফিরে যাচ্ছো ল্যাম্পপোস্ট থেকে
রাতজাগা চিত্রকরের আরাধ্য অনিদ্রা থেকে
হৃদয়ের হলুদ আঙিনা থেকে কপোত চিৎকারে
জানলায় ঢেউ ওঠা দৃশ্য থেকে তুমি ফিরে যাচ্ছো
অমল ধবল জ্যোৎস্নায় শাড়ির মৈথুন তুলে;

পিতৃপুরুষের অভ্যাস থেকে ধরো আমি নিয়ে গেছি সাতাশটি কদাকার গুঁড়ি।
ধরো আমি মরে গেছি গোড়ালীর কালসিটে দাগে।
ধরো আমি এখনো বলে উঠি, অন্ধ কোকিল, আমি বসন্ত নই।

এখানে নির্জনতা ভর করে আছে;  ট্রাফিক আইল্যান্ডগামী কংক্রিটগুলো
বেজে ওঠে ঝনঝনিয়ে... সব কবি চলে গ্যাছে এ শহর ছেড়ে। চলে গ্যাছে
তোমার নৈঃসঙ্গের ডাকে। তুমি এখন ২৫তম শ্বেতপদ্ম।

হেঁটে যাও
একা
একা
উড়ে উড়ে
শহর আগুন করে
ভুল বসন্তে
দেহের বার্নিশে
শোকের মতোন
গম্ভীর মৌনাভাসে

তীব্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে উদ্দাম কুয়াশায়
বৃষ্টির মতো ঝরে ঝরে পড়ো করোটির ম্লান রোদে


শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ

কতকাল পর সে আমাকে ডাকলো কফিনের ভেতর থেকে কর্পূরের গন্ধ মাখানো নামে।

বাইরের দুনিয়ার তাবৎ মুর্খরা তখোন স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে হাস্যকর জীবন যাপন করছিল; সে আমাকে ডাক দিল গাঢ় ঘুমে আচ্ছাদিত নাম ধরে। কিন্তু তার কণ্ঠস্বরের ভেতর আমি বন্দি হবার বদলে চর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেলাম; অতঃপর শিকারির চোখের মতো স্থির হলাম এবং মিশে গেলাম হিমায়িত রোদে। কতকাল পর আমি তাকে ছুঁয়ে দেখলাম-

কেউ জানতে পারেনি কফিনে নিদ্রিত শীতের নিঃরোদ উপাখ্যান; কেউ জানে না শ্মশানময় কর্পূর ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত সঙ্গমঘ্রাণ। মুর্খরা নিরাপদে রাম নামে মত্তরোল ...।


শোক প্রস্তাব

জীবনের পতনসমূহ এখনো নিকটবর্তী নয় বলেই এই শোক প্রস্তাব।

খুব ছেলেবেলায় একটি টিয়াপাখির পতন দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা কয়েকজন জেনেছিলাম হত্যার জন্য মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু নিখুঁত টার্গেটে ট্রিগার টিপতে জানলেই হয়।

প্রিয় বন্ধুগণ, মধ্যদিন আসন্ন। প্রায় পৌঁছে গ্যাছি। এখনো নিজেকে নির্মম প্রহৃত ভাবতে পারছি না। অথচ, আপনারা, আমার সুহৃদজন, এমনকি শত্র“গণও, কী চমৎকার উপভোগ করে চলছেন নিজস্ব পতন।


মৃগয়া

আমি তার কিন্নর কণ্ঠ শুনতে পাই।। সে আমার নাভীদেশে হলুদ ফুলের সন্ধান করে বেড়ায়।। মৃত মৃগের অস্থির ভেতরে তলিয়ে যায় তার প্রসিদ্ধ যৌবন- রতিসংলাপ।।

আদ্যশক্তি, আর কত নিদ্রা যাবে? এবার আমার স্পর্শের প্রত্যুত্তর কর।। তোমার নক্ষত্র খচিত পাঁজর থেকে আমি তাকে মুক্ত হতে দেখেছি।। তার হাতে ক্রুশবিদ্ধ জেরুজালেম- উলঙ্গ যিশুর সামনে সুনীল শৈশবে বেড়ে উঠছে নিষ্পাপ জুডাস।।

দেবী, হে সিক্ত-যোনী মহামায়া, আমার নাভীমূলে প্রবল চুম্বন দাও- সে মৃত হরিণের মজ্জার ভেতরে জুডাসের গোপন দীর্ঘ রাত।।


জবা

ভোর থেকে ফুটে আছো। ভোরে থেকে তুমি আমাদের।।
আমি সম্ভবত হারিয়ে যাবো তোমার রক্ত গহ্বরে।
অতল
মৃত্যু থেকে মুখ ফিরিয়ে তোমার পঞ্চমোহনায় আশ্রয় চেয়েছি-
দাও; আমাকে তোমার অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও

নগরীর দীপ সঙক্রমিত হয়ে আছে গোপন ব্যাধিতে
দিন নেই রাত নেই আলোকিত সড়কগুলো হিংসায় দহে
আর কোন ঠাঁই নেই, অনির্বাসিত হয়ে আছি জরায়ু বরাবর

দীর্ঘ বৃন্তমূলে যৌনতা দেবো -পরাগায়নের নিশ্চয়তা-
অমরাবৃত্তে ঠাঁই দাও; ভোর থেকে ফুটে থাকা
নির্গন্ধ রূপসী, তোমাকে তুমুল সঙ্গমঘ্রাণ এনে দেবো


কয়েকটি পাখির ডাক ও অন্যান্য

আজ রাতে কয়েকটি পাখির ডাক শোনা যাবে তোমাদের তেমাথায়। সেখানে একটি গর্তের ভেতরে লুকানো রয়েছে আধেক গোধূলি রঙ। আজ রাতে গোধূলি দেখবেন যাঁরা, তাঁদের স্মৃতিমালা রক্ষিত হবে প্রতি শতকের রৌদ্রতম দিনে। অধরা, অদৃশ্য হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছি- আমায় শুষে নেবে শীতল আলখেল্লার গভীর কালো রঙ।  নিঃশব্দ্যে।।

আর শেষতম দিনে আবার চন্দ্রোদয় হলে মুখোমুখি হবো আমরা দু'জনা। বাম আঙুল থেকে তুমি তুলে নেবে বস্তিবাসীর কুৎসিত সঙ্গম দৃশ্যরাজি। ঘৃণায় মুষড়ে পড়ার আগে জানাবে- বড় বেশী অপ্রমিত ছিল তোমার হাবভাব। সন্ধ্যার কিছু পর জেগে উঠবে গুটিকয় উদ্বিগ্ন মুখের সামনে; সেখানে আমার মুখমণ্ডলের কোন প্রবেশাধিকার থাকবে না আর। টিভি চ্যানেলগুলোর নতুন মুখের সন্ধানের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়া তরুণী, আমারও প্রেমিকা ছিলে তুমি।

কয়েটি ইঁদুর দৃশ্যের মতো দেয়াল থেকে ঝড়ে পড়তেই ভূ-মণ্ডলে নেমে আসে হিম ঋতু। অনভ্যস্থ তুষারপাতে ভরে যায় আমাদের নাতিশীতোষ্ণ মাঠের সবুজ। রঙ বদলে যায়, বদলে যায় অনুভূতির সংজ্ঞার মতোন। বিষণœ বিকেল মানে পড়ন্ত রোদের নিথর আলস্য নয়, এখন এখানে বরফের প্রাচুর্যে কোন অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে না আর- গভীর চাদর জড়িয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া


সেখানে কোন আগুন ছিলো না

সেখানে কোন আগুন ছিলো না, তবুও তারা জ্বলে উঠেছিল।। আমি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি; তাই চলে এসেছিলাম। পথের উল্টোদিকে তারপর ওরা জটলা ধরে ভীষণ অশ্লীল আচরণ শুরু করে দিয়েছিল। নিসর্গকে জবাই করে হত্যার পর গর্ধভগুলো হো হো করে হাসছিল, আর একটি হিজড়ার দাড়িয়ে প্রস্রাব করার দৃশ্যের দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকাচ্ছিলো যেন ওখানে সাদাকালো সুচিত্রা সেন উত্তম বাবুর সঙ্গে রোমান্টিক সংলাপে লিপ্ত। আমি এ দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না এরা এরকম নোংরা হতে পারে।

**
কার্যত তুমি আমাকে হারিয়ে দিয়েছ। চুম্বনের সময় ভাঙ্গা রিক্সায়ও যে পাখা গজায় তা তুমি না বললে আমি কখনোই জানতে পারতাম না। বলাৎকারকারী পুরুষ দণ্ডের অসুখে ভোগে। এপেন্ডিক্সের মতো ওটাও ফেলে দিলে ছেলেগুলোর এ রোগ সেরে যেতোÑ তোমার এ আক্ষেপে আমি মাটির সাথে মিশে যাই।

**
ভালোই হয়েছে আমি চলে এসেছিলাম, না হলে আমাকেও ভাল্লুকে খেতো। অই গর্ধভগুলোকে ভাল্লুকে খেয়েছিল। পরদিন সকালে আমি সে স্থানে কোন ছাই দেখতে পাইনি। কিন্তু নিজেকে খুব দণ্ডিত মনে হচ্ছিল।

**
আমি তাকে কোনদিন অভয় দিতে পারিনি। অথচ সে আগুন খুব ভালোবাসতো।


কবিগৃহের কবিতা
(কবিজন হাবীব ইমন করকমলে)

আপনিই থাকবেন উঁচুতে- জ্যোৎস্নায় বুক ভিজিয়ে- বৃষ্টির স্নেহে
রাতভর কবিতার উল্লাসে। আপনাকে ঘিরে থাকবে প্রমিত উপমার দল;
যেমন থাকে সবসময়। মস্তিষ্কের অবদমিত যৌন ক্রোধ থেকে খুঁটে খুঁটে
এক একটি অধীর শব্দ তুলে নিয়ে আসবেন শুভ্র বলাকার স্থৈর্যে;
আর স্বর্গ থেকে ইন্দ্রাদি দেবতাগণ পুষ্প বৃষ্টির মতোন আপনার জয়গানে
ছাদ জুড়ে পাঠাবেন মেনকার কুচমুদ্রার চিরযৌবনা রোদ

ধন্য আপনি, ধন্য আপনার মধু-অভিমান

আপনার গৃহের প্রহরীগণ নিপুন দক্ষ হাতে নিধন করে চলছে
প্রতিটি অ্যাটমিক অবাধ্য অন্ধকার শব্দকে। প্রবল প্রতিরোধের
মুখোমুখি স্যাডিজম এখনো আপনার অজর ব্যুহে।
জ্যোৎস্নাপ্রিয় কবির গৃহে অন্ধকারের কোন ঠাঁই নেই জেনেও
অবৈধ প্রবেশাধিকারী লজ্জিত মীনের জন্য অন্তত এক কোষ
ক্ষমার সলিল ছুঁড়ে দিন পশ্চিমের জানালায়--

কবিগৃহে সকলের প্রবেশাধিকার থাকতে নেই, একদিন বৃষ্টির বিকালে
এভাবেই আপনি একটি কবিতা লিখেছিলেন।।

অনুমতি দিন, আমি তার প্রথম বিমুগ্ধ পাঠক হই।।


তিনটি কবিতা


বিড়াল
বিআল, আমিও দুধ ভালোবাসতাম
শৈশবের নির্বিঘœ আলোয়
এখনো কাঁটা বিঁধে যায়- আনন্দের
নৈঃশব্দ্য শৃঙ্গারে ফুলে ওঠে বেদনার ব্লাউজ।
বিআল, আমাকে শেখাও মিঁআও মিঁআও ডাক
গেরস্থের পায়ের কাছে বসে ঘুমোবার সাধ
অনেক দিনের। মায়ানেকড়ের ঘেউ ঘেউ
শব্দ শুনে ক্লান্ত এখন; আমাকে শেখাও
কণ্টকের দ্রুত-নিঃশেষকরণ কলা

ইভ, তোমাকে বলছি

ইভ, তোমাকে বলছি, বাম পাঁজরে দগদগে ক্ষত;
যেন নিঃশব্দ কাশ্মীর- আর্তনাদ আর্তনাদে
চুড়া থেকে দরদর করে নেমে আসছে ঘাম
            ভীষণ শীতল;
হাড়ের ভেতর সহিংস আগুন জ্বলেÑ
তোমার দুঃখ ছিপছিপে চিলির দৈর্ঘ্যরে থেকে দীর্ঘতর।
পাড়ি দিয়ে এসেছ হরপ্পা-মহেঞ্জদার
মায়ান ব্যাবীলন হয়ে জেরুজালেমের শুষ্ক ভূমি;
ইভ, আত্মবৈরী দ্রাবিড়ের
কৃষিজীবিতায় সন্তানের বেশে
        জন্ম দিয়েছ শত্র“দল;

তৃতীয় কবিতা

বহু চিন্তায় ভরপুর এ করোটি;
স্কাউন্ড্রেল লাইটটা জ্বলে জ্বলে সার;
আমরা স্পর্শহীন থেকে যাবো
        গগনবিদারী কামনায়।
এই দ্ব্যর্থতার হাত ধরে বসে থাকো
উইকি যুদ্ধে ধৃত যারা
অচিরেই মুক্তি পাবে সব-
তোমার হাসির পশ্চাতে তাদের মৃত্যু লিখে রেখেছি;

এগার থেকে কুড়ি

দীপু দা’র টি স্টল সংলগ্ন চেয়ারে বসে
(আশরাফ এবং সবাক এর সাথে)

আমাদের চোখ জুড়ে স্বপ্ন ঠেঁসে দেওয়া হয়নি। স্বপ্ন নামক শব্দটি আমরা নিজেরাই চিনে নিতে হয়েছে- বুঝে নিতেও। বড়বেশী অদ্ভুত ভাবে উল্লিখিত শব্দটি আমরা আবিষ্কার করি বালিকা ইস্কুল মোড়ের একটি বিলবোর্ড দেখে- একটি সোনালী হাত কাঁপছিল; আর আমরা দুইটি লিপষ্টিকস্নাত ঠোঁট লক্ষ্য করে এগুচ্ছিলাম। আমাদের পূর্বজরা যে এ রকম দৃশ্য দেখেননি, এমন নয়, বরঙ অনেক লিপষ্টিককাতর ঠোঁট তারাও নির্বিচারে রক্তাক্ত করে উত্তেজিত হয়েছিলেন। এবং লিপষ্টিকের কৃত্রিমতায় বিরক্ত হয়ে বিধান দিয়েছিলেন- স্বপ্ন বলে আসলে কিছু নেই; স্বপ্ন শয়তানের প্রলোভন মাত্র। আমরা মানতে পারিনি। ফলশ্র“তিতে অভিযুক্ত হতে হলো বিধিবদ্ধ নিয়ম ভঙ্গের গুরুতর অপরাধে।
#
অভিযুক্ত কয়েদীর চোখ থেকে খণ্ড খণ্ড ত-এরা উড়ে গেলে যেই যেই দৃশ্যর অবতারনা হয়:
১) আশু সমাধানের আশায় সালিশি কর্মকাণ্ড শুরু হয়
২) চাঁদ থেকে চন্দ্রবিন্দু খসে গিয়ে নাসার টেলিস্কোপে ধাক্কা খায়
৩) মেয়েদের চোখে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন পুনরায় প্রতিস্থাপিত হয়
৪) একজন বন্ধু তার শত্র“র জন্য চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে ওঠেন
৫) শাড়ির প্যাঁচের মধ্যে মহিলারা আরো বেশী ঘনায়মান হতে থাকে
৬) দর্শণের সূত্রসমূহ থেকে একে একে বেরিয়ে আসেন আমাদের প্রিয় অপ্রিয় দার্শনিকগণ
৭) নায়কের পরাজয় দৃশ্যে দর্শকেরা হাত তালি দিয়ে ওঠে
৮) কেউ কেউ চোখ মোছে
৯) যে গান গায় সে মারা যায়, যে বেঁচে থাকে সঙ্গীত তাকে ছুঁতেও পারে না
১০) শাহানার চোখের জল আশাবরিতে রূপ নেয়
#
আর এদিকে আমি ভালোবাসা পেতে পেতে বিরক্ত হয়ে উঠি। এক বৃষ্টিতাড়িত সন্ধ্যায় দীপু দা’র টি স্টল সংলগ্ন চেয়ারে বসে তিনটি ভেজা পাথর, কিম্বা স্বপ্ন অথবা নির্জলা মিথ্যা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করতে করতে অনন্ত নাস্তিতে ভরে ওঠে। সেখানে এক গাঢ় দৃশ্য থেকে জন্ম নিতে থাকে অস্তিত্বহীন মেঘ। পৃথিবীর আয়ানোষ্ফিয়র থেকে যারা দেখে গলির অন্ধকারে শিউলি ফুলের ক্রমাগত নিঃষ্পেশন, গাভীর পা বেয়ে বাঁটের দিকে ধাবমান দুধরাজের ক্ষিপ্রতা, মহিলা হোষ্টেলের পাশ দিয়ে রাতভর বনরাজের  নৈঃশব্দ্য পায়চারী, তারা আসলে কিছু নয়; আমাদেরই সংলগ্ন জীবন থেকে বিতাড়িত কিছু মেঘস্বর। পাথরের অথবা স্বপ্নের শরীর থেকে শববাহী মানুষের গন্ধ নিয়ে জন্ম নেয় এই মেঘঘন কথারাশি। যার নাম কবিতা হলে কোন ক্ষতি ছিল না।


বেডরুমে

জানালায় রোদ পুড়ে ছাই হয়-
কাঠে লেপ্টে আছে ভুল বার্নিশ

বালিকার প্রথম প্রণয় শোধ হয়
উরুসন্ধির আলতা রঙে
        মাছি
    ওড়ে

বালক তার নাম দেয় জ্বর


সিগনেচার

ঘুম আর ঘোরের বিপর্যয় থেকে উঠে আসো তুমি;
শব্দ করে নেমে আসে রাত-
রাতের শব্দে ধীরে ধীরে জেগে ওঠো মানবিক

পাঠকের দৈনন্দিন কলামগুলো গোস্তের গন্ধে ভরপুর
তাত্ত্বিক আলো জ্বেলে বসে আছেন প্রাজ্ঞ আমলার দল
তুমি জাগো
জাগো
এ-ফোর ভূগোলের
নাতিদীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে
ধীর বিস্ময়ে

মহান মোহন চির আরাধ্য
আলোচিত সিগনেচার,
জেগে ওঠো
ধীর সংগীতে একবার;

 
ক্ষমা

আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখছি
নামহীন দীঘির পাশে বসে সারা রাত নৈঃরাশ্যের নিবিড় ক্ষমা;
অথচ ক্ষমার অযোগ্য এখন এইসব পঙ্ক্তিমালা,
এই মেঘার্দ্র আকাশ, ভাঙ্গা চশমার দীর্ঘ ছায়াÑ

ক্ষমা চাই কলমের কাছে
ক্ষমা দাও দীঘিÑ
আজও তোমার নাম দিতে পারিনি এমন দুর্ভাগ্যের শহর আমার

ছোট পায়ে   
ছোট ছোট পায়ে
বেড়ে উঠছেন কারা?
কাদের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে ধীরে?
ওদের চোয়ালের হাড়ে মানচিত্র জেগে উঠছেন। দেখছি।।
সেই মানচিত্রের অক্ষ-দ্রাঘিমা ধরে অভেদ মানুষের স্রোত
সেই মানচিত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ প্রতীজ্ঞার দিন
মুঠো ভর্তি মাটি, মুঠো ভর্তি ওদের দিনের সূর্য।। আমি চাই
ক্ষমা মানচিত্রের কাছে।। ক্ষমা দাও মানচিত্র কিম্বা মিছিল।।

নায়িকার মতো হেঁটে আসছো
গল্পের মতো গভীর নিঃশ্বাসে
এখন গল্পের দিন---
আমার রক্তবিন্দুতে তোমার অভাববোধ হয়ে আস। এ গল্পে।।
শেষ গল্পের প্লটগুলো ভুলে যাও;              ক্ষমা দাও গল্প।।

ক্ষুধা আর ক্ষুধাহীনতা        কতদূর   
এক দীঘি জল     কতদূর নাম    একটি কিংবদন্তি দরকার
নামহীন দীঘি    কিংবদন্তির অভাবে
একটি কিংবদন্তি    কতদূর        কবে হবে?
একটি রাতের ক্ষুধা            একটি রাতের ক্ষমা
আমি দেখছি সবুজ পায়রা উড়ে আসছে টলোমল জলে মিশে যেতে
নামের অভাব থাকবে না;     দৃশ্যের অন্তরালে ছায়া নেমে আসে


তুমি

উন্মোচিত হও- তুমিতো ধোঁয়াশা নও তাঁর মতো;
কল্পণার উঠোন তোমাকে হতে হবে না।
যতই দুর্বোধ্য হও- তুমি সত্য; আগুনের উষ্ণতার মতো
শেষ রাতের ক্লান্ত চুম্বনের মতো
ঘামের মতোন- যতোই চোখ তুলে দেখি
ততোই তুমি
তুমি হয়ে যাও-

বিস্ময়ের চাদোর জড়িয়ে অতিক্রম করে চলছো মাঘের শীত। তুমি গ্রন্থজাত নও- বিবিধ অক্ষর থেকে বহুদূরে সরল আদিকোষ তুমি- তোমাকে আনন্দ দিতে আমিই ঈশ্বর হয়ে যাই- হেমন্তের ঈশ্বর- মেরু দেশের তুষারপাতের বিভ্রম ডিঙ্গিয়ে

আমরা পরস্পর কথা বললেই বৃষ্টি নেমে আসে কোথাও কোথাও
হাজার হাজার উপমা ধেয়ে আসে আমাদের পারস্পরিক একীভবনে

তুমি উন্মোচিত হলেই উত্থিত হয় আমার জ্ঞান
গতকাল খুঁড়ে তুলে নিয়ে আসি পিতৃপুরুষের ঋণ
মাতাল করোটি- অতীত মেঘ-;
তুমি স্থির হলে থেমে যায় আমার বিকাশ
ধোঁয়ায় ঢেকে গেলে থেমে যাবে
সব নির্মাণ।।
তুমি, আলোকিত হও
যাবতীয় বিভ্রম থেকে মুখ তুলে


ব্যাধি

তোমার করে আঙুলে বসতি স্থাপনে উদ্যোগী হ’তেই
দ্বিজন্ম অভিসারে মুখ ফুলিয়ে কাঁদ; এবং
অভিসম্পাতে ভরিয়ে তোলো পারফিউম ভ্যালি
চোখের রঙ --
কয়েক টুকরো গত দিন, রুটিরুজি
টিফিনবক্স, স্মৃতি-বাকসো আমার অপেক্ষায় রেখে

আমার অপেক্ষায় বিদেশী কায়দায় গোসল করো
আতর মাখো উপমাদ্বয়ে, কাঁধে
বিরহের অতুল আস্বাদে ভেজ অবিরাম;
চুল শুকোতে দাও অতঃপর-
হাতে পেতে দ্বিপ্রহরের নিটোল রোদ ছুঁয়ে দিলে
    ভয় নামক ব্যাধি পেয়ে বসে চোখে

বেহালার বাদকেরা এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছেন শহরের কোনায় কোনায়;
অথচ জানিই না একদা আমি জন্মেছিলাম
অথচ আমি জানিই না গর্ভপাত আইন
সমবন্টন নীতি মানে কি না;
অথচ আমি শপথ করেছিলাম শপথ ভাঙবোই ভাঙবো

বরঙ তোমার চুল থেকে বাষ্পের মতো উড়ে যাচ্ছে
একদা লিখিত আমার থরোথরো পঙ্ক্তিমালা
হায়, হৃদয় চুরমার করে এখন আর বৃষ্টি নামে না
যেহেতু আমি জেনে গেছি নৈর্ব্যক্তিকতার দিন শেষ



গুহাবাসীনি

আমাদের ঘুম কেটে গেলে রোদ নেমে আসে অজন্তায়
গুহাবাসীনি, ভোর হও এবার- দোরে দোরে মাধুকরী

শীত আসলেই উঁকি দিতে পারবে
এখন আমি মিছিল থেকে নেমে আসি
- দাঁড়াও, দাঁড়াও

কয়েক বছর ধরে বাথটাব থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে রঙিন পানি
আলাদা হয়ে থাকা পারফিউম থেকে ভেসে আসছে বিষাক্ত সংলাপ
সোমা অসম্ভব ভালো লোক ছিলো
অথচ মেয়েটা কেমন মুটিয়ে গ্যালো, দ্যাখ;
এই যে ঘুম কেটে যায় বারবার
কি যে করি,ক্বী করি

গুহাচিত্রের মানুষেরা, ওকে তোমরা শোনাও প্রতœইতিহাস
ওর ফসিল শীঘ্রই পেয়ে যাবো- বাম হাতে দিয়ে রাখ ছুরি
ডান হাতে একখণ্ড মুর্খ অভিযোগ হলে আরো ভালো হয়;
আর্কিওলজির ছেলেদেরওতো বিনোদন দরকার- না কি।।

সোমা মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিলো
সোমা মেয়েটা মিছিলে ছিলো
সোমা মেয়েটা শেষমেশ মিছিলই হয়ে গ্যালো
দাঁড়াতে বলেছিলাম, শুনলো না গন্ধক-রমনী।।

শীতের সকালে হাড়ি হাড়ি পারফিউম আসে আমাকে উদ্দেশ্য করে
প্রতেœর উনুনে দিনভর জাল দেই শ্লোগান, বিবিধ সংলাপ
উত্তাপে ঘন হয়, ক্রমেই ঘন হতে থাকে আমাদের ঘুম
সোমার বাথটাবে আদিপুরুষেরা পুনরায় গুহাচিত্র আঁকতে থাকেন
পুর্ণোদ্যমে।।


নির্ভয়
(রাতিফকে)

একটি ছোট পাখি-
        মুখোমুখি;
বিস্ময়
বিনয়ের ওড়াওড়ি দেখেনি-
সব ডালে
সমস্ত ডালে একদিন রব উঠবে
ওড়ো, যতো ইচ্ছে ...
কয়েক টুকরো রোদ থাকবে না
এক ও অখণ্ড আকাশে সবাই একদিন উড়বে
অবিরাম রৌদ্রে, বহু মেঘে আর
বৃষ্টিতে।।

একটি পাখি
    ছোট পাখি
সব পাখি একসাথে
বেড়ে উঠবে নির্ভয়ে



কার্ডিগান হারিয়ে গেলে

কার্ডিগান হারিয়ে গেলে ইচ্ছেরা অমিতব্যয়ী হয়ে ওঠে।
আমাদের দিকে ছুটে আসে তীব্র ভয়,
করোটিতে জমানো রৌদ্র।
কয়েকটি অতিকায় হাতির নাসিকা রন্ধ্রে
খুঁজে পাওয়া যায় অবলুপ্ত সকাল;
শুকনো পাতায় জমানো আগুন আর
গেল শীতের উষ্ণতা এখনো বকেয়া রাখা
বক্তৃতাপ্রবণ সভাসদগণ।

রিক্সার হুড থেকে কার্ডিগান কার্ডিগান বলে
মৃদু স্বরে কে যেন কাকে ডাকে;

কার্ডিগান মানে মাঘের মধ্যরাতে
ফুটপাতে উদোম শিশুর বয়স্ক হামাগুড়ি।
অথবা, নিকট ইতিহাস থেকে
একে একে ফিরে আসা প্রাসাদ বালিকারা,
যারা গান গায়, নাচে আর কেঁদে বুক ভাসায়;
তাদের দেহে কোনদিন শীত নামে না।

ঐদিকে,
ঝোপের কাছে কার্ডিগান হারিয়ে যাওয়া পুরুষেরা জেনে যায়
সমস্ত রাত-মানবীর নিকনেম রেড কার্ডিগান।






মিছিলে কাছাকাছি থেকো
চুম্বনে বিশ্বাস নেই, সশব্দে হাসো
হাসিতেই রাগমোচন হয়-

মিছিলে কাছাকাছি থেকো
মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে যৌনতার অধিকার
ভাতের ভোটের বিশ্বাসের অধিকার-
    অবিশ্বাসের অধিকার চাই;

চার চারটি দশক ধরে বিশ্বাস করে
স্নেহ দিয়ে মরেছি অন্যের সন্তান

মিছিলে হারিয়ে যেওনা, নিকটবর্তী থেকো
শ্লোগানেও রাগমোচন হয়

এক থেকে দশ

মধ্যরাতের নোট

তুমি জেগে থাকো মধ্যরাতের নোটে
ডেল কোম্পানির ক্ষয়িষ্ণু অক্ষরে।

আঙুলে যে পৃথিবীর জন্ম হয়
সবুজ অধীর
নীল, ঐকান্তিক;
মধ্যরাতে সেখানে ঝড় ওঠে
করুণ মসৃণ।
তুমি সেই পৃথিবী কখনো কখনো-
সমুদয় উপাদান হয়ে

কী বোর্ডে প্রবাহমান দশটি আঙুলে
তুমি জেগে থাকো আমাদের যন্ত্র-রাতে


আমি জেগে আছি

অবসাদ ঘিরে থাকে চেতনার রোদ
চিনলেই হয়, আমি জেগে আছি।
ফেরার সময় নেই কারো- আমার
কিম্বা তোমার; শুধু পরিচয় লাগে
তারপর সব নিজস্ব নিয়মেই হাঁটে
অবসাদ ঘিরে আছে, আমি জেগে আছি
চিনলেই হয়, রোদের শরীরে কত ক্ষয়

যে বাঁশি বেজেছে ধীরে, অল্প শিহরনে
সেই সুরে মন রাখো; মন-গহিনে, এমনি
হয়, মৃত্যুকে মনে পড়ছে তোমাকে নয়;

গানের আগে বাঁশুরীর ঝড় তুমি হয়ে আস
মেঘের কবলে রোদ, রোদে ভাসে জল;

জল দাও, জল দাও, স্নানাভাবে দাও
অধীর শীতল; যাবেইতো জানি সখী
এই জল রোদে মিশে বাষ্পের গানে;
জেগে আছি আমি তবু ভুল অভিসারে।


দুইটি কবিতা

১.(বিষপান)
সমুদ্র মন্থনে সুখ পাই- সুখ পাই আকন্ঠ পানে
অমৃতের লোভ নাই- জলের গভীরে বালুর রেখা
আচ্ছন্ন পানে দেখছি সাপ আর বেজি
মিলেমিশে গহিন সংসারে- হাস্যদীপ্ত;
সবুজ হৃদয়ের তরুনীরা সমুদ্র হতে চায়
ঠোঁটভরা বিষের থলি- আমি চুষে খাই
বিষভাণ্ডের বিষুব অঞ্চল।

২.(অভিমান)
অবুঝ পদ্য লিখে লিখে কত কাল হল ক্ষয়
কত প্রহর অযথাই কেটেছে অন্ধকারে একা
নীল বই পড়ে নিরর্থক করেছি ব্যয় কতো
ঘোরতর আবেগ। এইবার বৃষ্টি এলে শহরে
ভিজবো না দাঁড়িয়ে ছ’তলার বারান্দায়;
ইচ্ছে হলে হেঁটে যাবো নগরের পাশে দিয়ে
ইচ্ছে হলে ভাওয়ালের বনে পুঁতে দেবো
দ্রোহতম বীজ। তবু ভিজবো না আর।


দেওয়াল

তোমার সুশীতল ছায়াতলে
জেগে ওঠে উল্লাস-
ভাঙ্গে দেওয়াল, স্বপ্নের প্রতিমুখ;
তুমি ইঙ্গিতে ফোটাও ফুল
জলের তরঙ্গে আমার অভিবাসন

তুমি চেয়ে চেয়ে দেখ
চেয়ে দেখ সব নির্মম নির্বিকার

আমার উঠোনের সবটুকু স্বাপ্নিক রোদ
দু’ফোটা জলের দামে
চেয়ে নিয়ে হাসো মন্ময় ঢঙে
তুমি ইউটোপিয়ায় দেখ পৃথিবী
দেখ হাহাকার হয়ে গেছে গান


ধ্বনি

আমি তার অপেক্ষায় থাকি।।

সে শাওয়ার আর সেতারে
সমান স্পন্দিত হয়; হরিপ্রসাদ সম্প্রতি
এ দেশ ঘুরে গেলে
সে ধ্বনিত হয় রাখালী হাওয়ায়

আমি তার জন্য ইদানিঙ রাত জেগে থাকি-
একটি
    একটি
        করে রাত
সপ্তম সিম্ফনী সে আমার।।


একটি পুরোনো সম্পাদকীয়

আজ আমি একা নই; ফিরে দেখা ইতিহাসের মতো নির্বাসিতও নই। আমি প্রত্যুত্তরে অভ্যস্থ ভীষণ মাতাল এক। আমি একা নই। আমার একাকীত্বের কাছে তবু আজ বড় বেশী নিষ্ঠ।

ডান আঙুলের গোড়ায় সিকি শতাব্দি কালব্যাপি বেড়ে চলছে এক নিরর্থক আল্পনা। আমি তাকেও অমাবশ্যার মতো ভালো বেসে বেসে নদীর তরঙ্গে রেখে দিতে পারি। শুধু মধ্যমায় যে তিল ওৎ পেতে আছে তাকে কিছুতেই এড়াতে পারি না। বোধহয় কোনদিন পারবোও না।

আবেগের যেরকম কোন আভিধানিক নিয়ম নেই তেমনি আমিও চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্ন হতে দেখেছি চারটি আবিষ্ট রাস্তাকে। না, এখানে কোন পরাবাস্তবতা ছিল না; কোন বাস্তবতাও নয়; এক অধিবাস্তব আখ্যানের আড়ালে সূক্ষ্ম তন্তুর মতো বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছি শুধু। আমি। সমস্ত ঈশ্বরের একক প্রতিদ্বন্দ্বী।


কোন শোক সভা নয়

না, কোন শোক সভা নয়। স্নায়বিক দূরত্বে বসে একটি মিছিলের কথা লিখছি। প্রাণহীন জীবন থেকে যারা বিচ্যুত কিছুটা, তাদের কথা লিখছি। কথিত বৃষ্টিতে যারা প্রয়োজনীয় আহ্নিক জমিয়ে তোলেন, তাদের জন্য কোন শোক নেই। হে সভা, কোন শোক প্রস্তাব পাশ করার আগে অমরত্বের সনদ দাও। প্রথম জন্মের লজ্জা ভুলতে না ভুলতেই পরবর্তী মৃত্যু- কোন মানে নেই এই অসম জন্মের।


ব্যক্তিগত প্রত্নবিদ্যা
                
বেড়ে ওঠা ছাড়া আর কিছুই হতে পারিনি। তোমার দিকে তাকালেই সময়ের মানচিত্র দেখি, ভূগোল, ইতিহাস এবং ত্রিকোণমিতির ফলিত রূপ দেখি কী ভীষণ স্বচ্ছতায়। ছুঁয়ে দাও- অর্থ খুঁজে নেবো স্থবিরতার, হৃৎস্পন্দণের, ফুসফুসের অবিরাম পরিশ্রমী শিল্পের। কয়েকটি পোড়ামাটি এক করে জানিয়েছি আমরা জেনে গেছি পিতামহীর সপ্তকোটি নাম, করোটির মেঘ, চিবুকের সঠিক পরিমাপ; জেনে গেছি এখানে একদা গোপনে প্রোথিত ছিলেন কোন এক রজঃমানবী, তার কটিবন্ধের সুঘ্রাণ এখনো বর্তমান প্রতœবিভাগের পশ্চিম ঘরে। এ সত্য টের পাই তোমার ঘামঘন নিবিড় শীৎকারের মুহূর্তে- টের পাই, বাজির ঘোড়া কেবলি হেরে যায় এ সাতাশে এসেও তেমন


অপভ্রংশ শহরে অনস্তিত্ব বোধ

ধ্যানের মতো বসে আছে বালকেরা, কবে যাবে তুমি এই পথ দিয়ে?
সিঁড়ির গোড়ায় জেগে ওঠে বিলবোর্ড (সম্পূর্ণ রঙিন)
বালকের চোখে নেমে আসে প্রসন্ন রোদ।   


আমি ক্রমেই তোমাদের হয়ে যাচ্ছি। জবার মতো ফুটে আছো আনাচে কানাচে, গলির মোড়ে, ওভার ব্রিজের রেলিং ধরে জেব্রা ক্রসিং এ। মহানগরের গনগনে রোদে তোমাদের অম্লান ভঙ্গি, আহা, নির্ক্লান্তিলাস্যে লেবু পাতার রঙ। চুলে আর স্কার্টে বৃষ্টি ঝরে রাজপথে, নাগরিক চোখে। তোমাদের চোখে লাল-নীল জল, ঠোঁটে বহুজাতিক অভিনয়। আমি তোমাদের শতকে দাঁড়িয়ে তোমাদের হয়ে যাচ্ছি।

আমার সময় জুড়ে আপামর কুষ্ঠ রোগীর ঢল। পথে পথে ঘিনঘিনে বালিকারা আইসক্রীমের বায়নায় মত্ত। সূর্যের অশ্লীল রোদে ‘তাহাদের’ শরীর জ্বলে পুড়ে ছারখার। তোমাদের মতো নেই ‘তাহাদের’ নিভাঁজ ভাঁজ আর সুডৌল দ্বৈরথের মাঝখানে চিত্রকল্পময় অলৌকিক ড্রেন। আমার চামড়া ভেদ করে মগজ অবধি কর্পো-গাণিতিক অভিসন্ধ। তোমাদের আহ্বানে বধিরতা মেনেছি; বিলবোর্ডের নারীরা, আমি তোমাদের হয়ে যাচ্ছি।


ভুলমুদ্রা

বেহুলা, তোমার স্বপ্নে ছিল ভুল অন্ধকার। দেখ, বীজগণিত থেকে সরে এসে আমরা জ্যামিতি আর ত্রিকোনমিতিতে কী সুন্দর চিনে নিতে শিখেছি পথ- হিসাব কষে নির্ভুল। তুমি নদীতে নদীতে হাড়ের শব বয়ে নিয়ে গিয়েছ, খোঁপার গহিনে লেজ খন্ড বয়ে নিয়েও কোন উপপাদ্যেরই সঠিক প্রমাণে পৌঁছাতে পারোনি। না তুমি, না জীবন, কেউই বাঁচতে পারোনি। বেঁচে গ্যালো বামহাত সর্বস্ব চাঁদ। ইতিহাসে তার জাত্যাভিমানের নিপুণ জ্যামিতিক কাঠামোটি ঠিকই সুস্পষ্ট এখনো। সদম্ভে। তুমি বাঁচোনি। তোমার চোখে কোন ত্রিকোণমিতি জ্যামিতি তুমি আঁকতে পারোনি। তাই রূপকথায় এসেও সেই একই ভুল করো। ভুল মুদ্রায় নাচ লম্পট ইন্দ্রের সভায়।

শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১১

সীসা

আমরা দু’জনে পেয়ে গেছি হরিনের খুর- মড়ক লাগা
মাছিদের শেষ গুঞ্জন; ঢাকার আকাশে
আজ অনেক ধোঁয়া, দু’জনে মিলে হয়ে আছি
পালকের নরোম শ্বাস। গাছেদের পাতা থেকে
মুছে গ্যাছে সেই কবে বসন্তের দাগ-
অজস্র বেগুনী আলো আর ট্রাফিক হলুদ রিরাংসায়
না, এটা প্রাচীন নাটকের একরৈখিক বিন্যাস নয়
এ শহরের সবকটি ইটে লেগে আছে কসমোপলিটন ধূলো
ভুলে গ্যাছো; ভুলে গ্যাছো এই শহরে ধূলো উড়িয়ে
বেজেছিলো ঘন অশ্বখুরধ্বনি- আমরা এসেছি
সেদিন-ইতো- সিসার মতো ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে রোদ