বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

আমি ও নিঃসঙ্গ ভেড়া



যে নিঃসঙ্গ ভেড়ায় চড়ে স্পিনিং মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম
তার কোন পশম ছিল না। তার কোন ইতিহাসও ছিল না।
সেই ভেড়ার খুরে মাতাল জিজ্ঞাসা ছিল, ছিল বুনো গন্ধ

কিন্তু মিলে প্রবেশের পথে বিশাল পাপোশে সেই গন্ধ-
খুর মুছে গেল। ফলে সে ভুলে গেল তৃণভোজ রীতি।

সুতরাং মেশিনের রাজ্যে সে আর আমি পরস্পরের
আমিষের উৎস হয়ে ক্ষুধার অপেক্ষা করতে লাগলাম

এ কোন নগর

এ কোন নগর? অ্যাত তীব্র আলোয় হাজার হাজার সাপেরা ক্রীড়ায় মত্ত; এ আলো ভেদ করা যাবে কি? মধ্যদিনে এখানে এসে পড়েছি-
আমার হাত থেকে গজিয়ে উঠছে আরো অজস্র হাত, নখ শল্যবিদ্যায়
পারদর্শী হয়ে উঠছে- চোখ গলে যাচ্ছে তীব্র আলোচ্ছটায়-
আমি এ নগরীর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি? এ নগর প্রশ্নবোধক আলিঙ্গনে টানছে
আমি তার আলোকিত কামনা উপেক্ষা করতে পারছি না-
আমার পুরনো হাতগুলো খসে পড়ছে- অভিজ্ঞ সিঁথি থেকে খসে পড়ছে
পরিচিত চুল- আমার বয়স্ক ঠোঁট গলে পড়ছে কালো রাস্তায়- যৌনাঙ্গ ভীত
হয়ে পড়ছে- আমি আমার কঙ্কাল ধরে ধরে হাঁটছি; তার হলদেটে পাঁজর থেকে প্রতিফলিত আলো আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে-
আমি চলে যাচ্ছি নগরের অভ্যন্তরে
নাভী বিন্দুতে
যেখানে আমার জননী বাস করেন
তাঁর কুয়াশাচ্ছন্ন নাভীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মতো
বসে থাকতে চাই---
তিনি আমাকে স্তন্যপান বিদ্যা শেখাবেন
বাঁশি বাজানো শেখাবেন
হাত মুষ্ঠিকরা শেখাবেন
কি করে হাঁটতে হয় মহাপিচ্ছিল বারান্দায়
তার কৌশল শেখাবেন-
তিনি আমাকে বেঁচে থাকার কৌশল পত্র পড়ে শোনাবেন-
আমার কঙ্কালে তাঁর স্নেহমুগ্ধ চুমু লেগে আছে
করোটির বাম দিকে কাজলচিহ্ন দেখে
খসে যাওয়া চুলে চাঞ্চল্য নেমে এসেছে- অভিমানে
আমি নগরের নাভী থেকে
আমার জননীর নাদেখা স্নেহ থেকে বহুদূরে চলে এসেছি

নগরীরর এ প্রান্তে যিনি শস্য ফলান- নষ্টামি করেন- বাসের হেল্পার যিনি
মেয়েদের পিঠে হাত দিয়ে তুলে নিতে চান গতির দিকে- তিনি আমার পিতা।।
আমি তাঁকে ব্রিজের কাছ থেকে চিনে নিয়েছি
সোডিয়াম লাইটের নিচে তাঁর সাথে ঘুমিয়ে পড়েছি
আমাদের যৌথ নিদ্রার উপর দিয়ে গড়িয়ে গ্যাছে বহুরাত
আমরা ঘুমিয়ে পার করেছি রাতজনিত দুর্ঘটনা সকল

আমার পিতা, যাঁর খোচা খোচা দাড়ি নেই
আমার পিতা, যাঁর লুঙ্গির বয়স দুই বছরের কিছু বেশী
আমার পিতা, যিনি হেঁটে হেঁটে চলে যান ব্রিজের অই পাড়ে
আমি তাঁকে সর্বাত্মক উপেক্ষা করে চলে যাই বছরের পর বছর

উপেক্ষা ও বেদনা শেষে নগরী অন্যপ্রান্তে স্থির হই। সেখানে খুঁজে পাই আমার গলে যাওয়া ঠোঁটের ফসিল, হাতের আঙুল আর চুলের কলপ- এই কুড়িয়ে পাওয়ার মহোৎসবে আমি সাহস ফিরে পেলে এক ভয়ার্ত অন্ধকার নামে নগরের সমস্ত ল্যাম্পপোস্টে। আমি আলোকিত কঙ্কালের ভীত পাঁজরে নড়বরে শান্তনা গুঁজে দিই- তার নির্লিঙ্গের কথা স্মরণ করিয়ে দিই--
কুষ্ঠরোগীরও পিতা হাওয়ার বাসনা জাগে- এরকম অভিশাপে ক্রীড়ারত সাপেরা শীতনিদ্রায় চলে যায়- আমি আলোহীন আলোকিত নগরের দুর্বোধ্য ঠিকুজি অবশেষে খুঁজে পাই চালের গুদামে--- পূর্বপুরুষের হায়ারোগ্লোফিতে উদ্ধারহীন ডুবে যাই অচেনা নগরের অন্ধকারে।